ময়মনসিংহ সিটির ৫ বছর : আক্ষেপের পাশাপাশি আছে কিছু অর্জনও 

সিটি করপোরেশনের নানা উদ্যোগে গত পাঁচ বছরে নগরের খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলা প্রায় বন্ধ হয়েছে।

ময়মনসিংহ জেলার মানচিত্র

২০১৫ সালের ২৯ জুন ময়মনসিংহ শহরের সড়কের পাশের আবর্জনা নিয়ে প্রথম আলোতে ‘সড়কে আবর্জনা, নাক চেপে চলাচল’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের ছবিতে দেখা যায়, ময়মনসিংহ নগরের পুরোনো ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কে ভাসছে আবর্জনা। মানুষ নাক চেপে চলাচল করছে।

শুধু ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নয়, পাঁচ বছর আগেও ময়মনসিংহ নগরের বিভিন্ন এলাকায় ছিল এমন আবর্জনার স্তূপ। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মনোযোগী হওয়ায় এখন আর সেসব চোখে পড়ে না। 

নগরের চর কালীবাড়ি এলাকায় ময়মনসিংহ-শম্ভুগঞ্জ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভাগাড়। সে ভাগাড়ের আবর্জনাও একসময় ছড়িয়ে পড়ত মহাসড়কে। দুর্গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় হতো পথচারী ও বাসযাত্রীদের। সে ভাগাড়ের আবর্জনাও এখন আর ছড়ায় না মহাসড়কে। কমেছে দুর্গন্ধও। সিটি করপোরেশনের নানা উদ্যোগে গত পাঁচ বছরের নগরের খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলা প্রায় বন্ধ হয়েছে। সড়কের পাশে আবর্জনা ফেলা ছাড়াও কয়েক বছর আগেও নগরের বেশির ভাগ সড়ক ছিল ভাঙাচোরা। এখন আর সে অবস্থা নেই। বেশির ভাগ সড়কই এখন চলাচলের উপযোগী। 

আগামী ৯ মার্চ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। নির্বাচনে মেয়র পদে রয়েছেন অন্তত পাঁচজন সম্ভাব্য প্রার্থী। সেসব প্রার্থীর প্রচারে বিগত সময়ে নগরের বিভিন্ন সংকট ও উন্নয়নের বিষয়টি আলোচনায় আসছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ময়মনসিংহ পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। ২০১৯ সালের ৫ মে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম নির্বাচন। প্রথম নির্বাচনের মেয়াদ পাঁচ বছর পূরণ হওয়ার আগেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচন। 

২০১৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন মো. ইকরামুল হক। তবে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আভাস মিলছে। এবার তফসিল ঘোষণার কয়েক দিন আগে থেকেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের চারজন নেতা মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য পোস্টার সেঁটেছেন নগরের বিভিন্ন এলাকায়। ওই সব পোস্টারে গত মেয়াদের বিভিন্ন নাগরিক ভোগান্তির চিত্র উল্লেখ করে সেসব ভোগান্তি থেকে নগরবাসীকে উদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

এসব পোস্টারের ‘জবাবে’ যেন পাল্টা পোস্টারও সাঁটানো হয়েছে মেয়র ইকরামুল হকের পক্ষে। যেসব পোস্টারে সিটি করপোরেশনের বিগত সময়ে উন্নয়নকাজের পরিসংখ্যান ও চিত্র দেওয়া হয়েছে। যেসব পোস্টারের সূত্রে ধরে সিটি করপোরেশন থেকে জানা যায়, গত পাঁচ বছরের নানা উন্নয়নকাজের পরিসংখ্যান। জানা যায়, সিটি করপোরেশন হওয়ার পর নগরে পাকা সড়ক হয়েছে ৩৫৮ কিলোমিটার। ২৪৯ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ করা হয়। নগরের ১৭১ কিলোমিটার সড়কে আধুনিক এলইডি সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছে। জলাবদ্ধতার উন্নতির লক্ষ্যে ১৬ কিলোমিটার খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। 

মো. ইকরামুল হক বলেন, ‘২০১৯ সালের মে মাসে মেয়র নির্বাচিত হই। এরপরই দেখা দেয় করোনার প্রভাব। করোনায় দুই বছর কোনো উন্নয়নকাজ হয়নি। সে সময় মানুষের জীবন রক্ষার কাজ করেছি মাঠে থেকে। এরপর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক মন্দা। এসব কিছুর পরেও আমরা উন্নয়নকাজ করেছি। এখনো চলমান আছে।’ 

গত পাঁচ বছরের কাজ নিয়ে কথা হয় ময়মনসিংহের একাধিক নাগরিক প্রতিনিধির সঙ্গে। তাঁরা জানান, রাস্তা, ড্রেনেজ–ব্যবস্থা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নতি হলেও ময়মনসিংহ নগরের অন্যমত প্রধান সমস্যা যানজট। যানজট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া সড়ক প্রশস্ত না করে অসংখ্য বহুতল ভবনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এটি নিরাপদ নয়। 

জনউদ্যোগ নামের নাগরিক সংগঠনের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বলেন, বিগত সময়ে দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন হলেও এখনো অনেক আক্ষেপও রয়ে গেছে। নাগরিক সুবিধা এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। 

ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন কালাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশন হওয়ার পর রাস্তাঘাট হয়েছে। তারপরও আমি বলব কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। আমরা চাই একটি আধুনিক ও যানজটমুক্ত নিরাপদ নগর।’