উপদেষ্টা আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়নি

কুমিল্লার মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের অনুসারী ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। গতকাল বিকেলে উপজেলা সদরেছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লার মুরাদনগরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুসারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষই মামলা করেনি। ওই ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি বলে জানিয়েছে মুরাদনগর থানা-পুলিশ।

আজ সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান।

আরও পড়ুন

এর আগে গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলা সদরের আল্লাহু চত্বরে উপদেষ্টা আসিফের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগ আছে, এ সময় স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুসারীরা সেখানে হামলা চালান। পরে আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে তাঁদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৭ সাংবাদিকসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হন।

তবে আসিফ মাহমুদের অনুসারীদের দাবি, হামলায় তাঁদের পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জনের দাবি, আসিফের অনুসারীরা আওয়ামী লীগের লোকজনসহ হামলা চালিয়ে তাঁদের পক্ষের অন্তত ১৫ জনকে আহত করেছেন।

আজ সকালে আসিফ মাহমুদের অনুসারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বর্তমানে কার্যক্রম স্থগিত) মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলাম। কায়কোবাদের লোকজন আমাদের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছেন। তাঁরা শুধু আমাদের ওপরই নয়, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপরও নির্মমভাবে হামলা চালিয়েছেন। আমরা এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। গতকালের হামলার ঘটনায় আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতকাল আহত ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।’

আসিফের অনুসারীরা আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন অভিযোগ করে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল ছাত্রদলের প্রোগ্রাম ছিল। সেখানে তাঁরা (আসিফের অনুসারীরা) পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছেন। সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে, মুরাদনগরে আসিফের অনুসারী বা এনসিপি নামে যাঁরা মাঠে আছেন, তাঁরা সবাই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের লোক। গতকালের ঘটনায় আমাদের আহত নেতা-কর্মীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনার পর আমরা পরবর্তী কর্মসূচি বা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়া কাউকে আটকও করা হয়নি, তবে পুলিশ ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, এ জন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের অনুসারী ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়। গতকাল বিকেলে উপজেলা সদরে
ছবি : প্রথম আলো

হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন

এদিকে মুরাদনগরে ওই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে সমাবেশ হয়। পরে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। কুমিল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব, কুমিল্লা ইয়ুথ জানালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, কুমিল্লা স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, কুমিল্লা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও কুমিল্লা ফটোসাংবাদিক ফোরামের উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ সময় হামলার সঙ্গে জড়ি সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে।

কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী এনামুল হকের (ফারুক) সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসানসহ কর্মরত সাংবাদিকেরা। কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদের (জিতু) সঞ্চালনায় হামলার শিকার সাংবাদিকেরাও ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী এনামুল হক (ফারুক) বলেন, ‘হামলাকারীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনতে হবে। হামলাকারীরা সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে নির্যাতনসহ রড দিয়ে পিটিয়েছে, ক্যামেরা ও মুঠোফোন ভাঙচুর করেছে। এসব ছবি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তবে হামলা করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে সত্য প্রকাশ বন্ধ করা যাবে না। কারা মুরাদনগর সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে, সেটা আমরা দেখেছি। আমরা সন্ত্রাসীদের পরিচয় শুধুই সন্ত্রাসী হিসেবে দেখতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। না হলে কুমিল্লার সাংবাদিকেরা কঠোর আন্দোলনসহ বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করবে।’