ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, মিলছে না নাগরিক সেবা 

বছরে পৌরসভার আয় প্রায় এক কোটি টাকা। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য টাকা বরাদ্দ থাকে। কিন্তু পৌরবাসী ন্যূনতম নাগরিক সেবা পাচ্ছেন না।

পৌরসভার ভবনটি প্রায় ছয় বছর আগে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ওই ভবনের দেয়াল, বিমসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়
গত সোমবার তোলা ছবি। প্রথম আলো

একতলা ভবনটি সীমানাপ্রাচীরে ঘেরা। সামনে ছোট পাকা সড়ক। পেছনে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি। প্রাঙ্গণে কয়েকটি ছাগল শুয়ে রোদ পোহাচ্ছে। আর তিনটি কুকুরছানা খেলা করছে। ভবনের বাঁ পাশে জলাশয়। ভবনের আঙিনায় মুরগি চড়ে বেড়াচ্ছে। নিচতলার কক্ষগুলোতে ফাটল। দুটি কক্ষে আবর্জনার স্তূপ। নেই সেবাগ্রহীতা বা কর্মকর্তাদের ভিড়। এই করুণ অবস্থা নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌরসভার ভবনে। বাগিজাপাড়া এলাকায় এই ‘খ’ শ্রেণির পৌর ভবনের অবস্থান। গত সোমবার সেখানে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র।

স্থানীয় সূত্রে ও সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, সোমেশ্বরী নদীর তীরে গড়ে ওঠা পৌরসভার বয়স ৩০ বছর ছুঁই ছুঁই। পৌর এলাকায় ছোট ছোট ধানখেত, কোথাও শর্ষেখেত বা সবজির খেত। আবার পাশে সোমেশ্বরী নদীর ধু ধু বালুচর। পুকুর-ডোবায় খেলা করছে হাঁসের দল।। বেশির ভাগ রাস্তাঘাট কাঁচা। আর্সেনিকের ঝুঁকি থাকলেও নলকূপ ও কুয়ার পানিই ভরসা। বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সড়কবাতিও অপ্রতুল। নালা ব্যবস্থাপনা একেবারেই নাজুক। পৌরবাসীর অভিযোগ, এটি কেবল নামেই পৌরসভা। নিয়মিত কর দিলেও ন্যূনতম সেবা মেলে না। পৌরবাসীর জীবনে উন্নয়নেরে ছোঁয়া লাগেনি।

পৌরসভার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের ১৫ জুন এই পৌরসভা যাত্রা শুরু করে। ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা থেকে ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়। পৌর এলাকার জনসংখ্যা ২৭ হাজার ১৫৭। তবে বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এর আয়তন ৯ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার। হোল্ডিং ৫ হাজার ৫১৯টি। খানা ৪ হাজার ৮২৩টি। পৌরসভায় মোট গ্রাম বা মহল্লাসংখ্যা ৩২টি। হাটবাজার ৩টি। এখানে আরসিসি নালা মাত্র ২ দশমিক ৪১০ কিলোমিটার ও ইটের নালা ৩ দশমিক ৫৩০ কিলোমিটার। মোট সড়ক ২৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে আরসিসি সড়ক দেড় কিলোমিটার। অন্যগুলো পাকা সড়ক। সড়কবাতি ৮৮২টি। 

স্থানীয় লোকজন বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানিনিষ্কাশন না হওয়ায় পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। এ ছাড়া সোমেশ্বরীর বালু ট্রাক ও লরিতে করে পরিবহন করায় বছরজুড়ে শহরের প্রায় সব রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা।

পৌর এলাকার চরমোক্তারপাড়া, তেরিবাজার, বাগিজাপাড়া, সাধুপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, রাস্তাঘাট, দোকান—সর্বত্রই ময়লা পড়ে আছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার কোনো ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা ও কাদা-পানি। নালা ব্যবস্থাপনা একেবারেই নাজুক।

নাজিরপুর মোড় এলাকার ব্যবসায়ী জামাল তালুকদার বলেন, ‘বর্ষাকালে অনেক জায়গায় পানি জমে যায় এবং ড্রেন থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। বাসাবাড়িতে থাকা অসহ্য হয়ে পড়ে। এ ছাড়া বালুর ট্রাক থেকে পানি পড়ে বছরজুড়ে কাদা থাকে সড়কে।’

সোমবার বিকেলে বিরিশিরি উতরাইল এলাকায় পৌঁছে কথা হয় আদিবাসী নেতা সাইমন তজুর সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে ইউনিয়ন ও পৌরসভার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। শুধু খাজনা বেশি দিতে হয়। কিন্তু কোনো সেবা পাওয়া যায় না। ভোটের সময় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা উন্নয়নমূলক কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কখনো তা বাস্তবায়িত হয় না। পৌরসভায় সরকারি বরাদ্দ তো আর কম আসে না।

পৌর ভবন, পৌর এলাকার সড়ক ও পৌর এলাকার বাসিন্দাদের নাগরিক সেবা না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মশিউজ্জামান বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। পৌরসভার নিজস্ব আয় বছরে প্রায় এক কোটি টাকা। তবে পৌরবাসীকে সব পৌরসেবা দেওয়া যাচ্ছে না। বর্জ্য, পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট আরও উন্নত করতে হবে। পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাঁরা সরকারি অনুদান কম পান। ট্রেড লাইসেন্স, হাটবাজার ইজারা ও অন্য ফরম বিক্রি থেকে সামান্য কিছু আয় হয়।

গত ১৮ অক্টোবর পৌরসভার মেয়র আলাল উদ্দিন মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।