বরিশালে প্রতিপক্ষের হামলায় ছাত্রদল নেতার দুই হাত ‘প্রায় বিচ্ছিন্ন’
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের এক নেতার দুই হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের নিয়ামতি বন্দরে এ ঘটনা ঘটে।
আসাদ উল্লাহ খান (২৫) নামে ওই তরুণ নিয়ামতি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি। তিনি নিয়ামতি বন্দর এলাকার মো. আলমগীর হোসেনের ছেলে। তাঁর অবস্থা গুরুতর।
পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার নিয়ামতি বন্দরে আসাদ উল্লাহর ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটে। পরে আসাদ উল্লাহকে উদ্ধার করে প্রথমে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে তাৎক্ষণিক পাঠানো হয় ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর)।
নিয়ামতি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাকিব মোছাব্বির আহত আসাদ উল্লাহর সঙ্গে ঢাকায় অবস্থান করছেন। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে রাকিব বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে গুরুতর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। সন্ত্রাসীরা আসাদের দুই হাত কুপিয়ে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে এবং দুই পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে (নিটোর) ভর্তির পর তাঁকে বড় একটি অস্ত্রোপচারের জন্য নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর দুই হাত ও এক পা ঝুঁকিতে রয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে আহত আসাদ উল্লাহর স্বজনেরা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে নিয়ামতি বন্দরে নিজেদের ফলের দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার পথে নিয়ামতি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল ফরাজীর ভাই শাহিন ফরাজীর নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন ধারালো অস্ত্র নিয়ে আসাদ উল্লাহর ওপর হামলা চালান।
দুই পক্ষের বিরোধের বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর দুর্গাপূজার সময় বরিশাল-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান নিয়ামতি বন্দরে এসেছিলেন। তাঁকে স্বাগত জানাতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন ফরাজী স্লোগান দিলে তাঁকে নিষেধ করেন আসাদ। এতে শাহিন ক্ষিপ্ত হয়ে আসাদকে চড় মারেন। পরে আসাদ লোকজন নিয়ে শাহিনের ছোট ভাইকে মারধর ও জখম করেন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসাদ উল্লাহ কারাগারেও ছিলেন।
বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ামতি বন্দরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আগের দ্বন্দ্বের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার প্রক্রিয়া চলছে। এখনো কেউ আটক হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল ফরাজী ও তাঁর ভাই শাহিন ফরাজীর মুঠোফোনে ফোন করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়। নিয়ামতি বন্দরের ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, ঘটনার পর থেকেই তাঁরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
বিষয়টি নজরে আনা হলে বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব নাসির হাওলাদার বলেন, ‘এমন নৃশংস ঘটনায় আমরা মর্মাহত। এমন ঘটনা একটা দলের জন্য দুঃখজনক। এ ঘটনায় দায়ীদের বিষয়ে আমরা দলীয়ভাবে খোঁজখবর নিচ্ছি। কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে দলীয়ভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’