বাগেরহাটের মোংলায় ‘নারী নেতৃত্ব হারাম’ বলে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে ভোট চেয়েছেন উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. একরাম ইজারাদার। তিনি ২০২১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইদ্রিস আলী ইজারাদারের (ঈগল) পক্ষে এক নির্বাচনী সভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুন নাহারের (নৌকা) বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে একরাম ইজারাদার ওই মন্তব্য করেন।
একরাম ইজারাদার সুন্দরবন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। গত শনিবার বিকেল চারটার দিকে সুন্দরবন ইউনিয়নের মুসল্লিপাড়ায় ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী সভায় তিনি ওই বক্তব্য দেন। তাঁর বক্তব্যের ৪১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর ওই বক্তব্য নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
ভিডিওতে আওয়ামী লীগ নেতা একরাম ইজারাদারকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা গজবের ভেতর নিমজ্জিত আছি। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। জনমনে কোনো স্বস্তি নেই, শান্তি নেই; তার কারণ, নারী নেতৃত্ব হারাম। নারী নেতৃত্বের অধীনে আমরা এখানে রয়েছি। আমাদের ভোটটা আমরা বেগম হাবিবুন নাহারকে (আওয়ামী লীগের প্রার্থী) দুইবার (ভোট) দিয়ে আমরা নারী নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করছি। তাই আমাদের এখানে কোনো সুখ-শান্তি অবস্থান করে না। যেটা সত্য, সেই কথা আমি এখানে আপনাদের কাছে বলে গেলাম। উনি একজন নারী, উনি রাজনীতি আর সমাজনীতির বোঝেন কি? কিছুই বোঝেন না।’
এ বিষয়ে মোংলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুনীল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা বক্তব্যটি শুনেছি। বক্তব্যটি যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
একরাম ইজারাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বা নৌকা প্রতীককে উদ্দেশ্য করে আমি এসব কথা বলিনি। জামায়াতের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে আমি এসব কথা বলেছি। উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বিভিন্ন সময় তাঁর বরাদ্দ থেকে আমাদের বঞ্চিত করেছেন। যার কারণে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলী ইজারাদারের (ঈগল প্রতীক) নির্বাচন করছি।’
মোংলা ও রামপাল নিয়ে গঠিত বাগেরহাট-৩ আসনে এবার সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের হাবিবুন নাহার ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলী ইজারাদারের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাঁরা দুজন নির্বাচনী এলাকায় দিনরাত প্রচারণা চালাচ্ছেন। সভা, সমাবেশ, উঠোন বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করছেন।
বাগেরহাট–৩ আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির মনিরুজ্জামান, তৃণমূল বিএনপির ম্যানুয়েল সরকার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) শেখ নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মফিজুল ইসলাম গাজী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) সুব্রত মণ্ডল। তাঁদের কাউকেই তেমন চেনেন না মোংলা-রামপালের মানুষ। তাঁদের তেমন কোনো নির্বাচনী প্রচারণাও নেই।