১৩ মাসের শিশু সঙ্গীতার চিকিৎসার খরচ জোগাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা–বাবা

বাবা শুভঙ্কর ঠাকুর ও মা বিজলী ঠাকুরের সঙ্গে মেয়ে সঙ্গীতা ঠাকুর। গত রোববার দুপুরে রাজবাড়ী শহরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনেছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় শুভঙ্কর ঠাকুর ও বিজলী ঠাকুর দম্পতির শিশুকন্যা সঙ্গীতা ঠাকুর শারীরিক জটিলতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। টাকার অভাবে জন্মের পর চিকিৎসা ছাড়াই এই দরিদ্র দম্পতিকে নবজাতক নিয়ে হাসপাতাল ছাড়তে হয়। এরপর শিশুটির যকৃৎসহ নাভির আকৃতি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটির চিকিৎসায় অনেক টাকার প্রয়োজন। সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসার খরচ জোগাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এই দম্পতি।

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা সদর ইউনিয়নের ভীমনগর গ্রামের জেলেপাড়ার বাসিন্দা শুভঙ্কর ঠাকুর ও স্ত্রী বিজলী ঠাকুর। সম্প্রতি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে তাঁদের অসুস্থ সন্তান নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। ঘরে ১২ বছরের আরেক সন্তান সমৃদ্ধি ঠাকুরকে নিয়ে জেলেপাড়ার মাত্র ৬ শতাংশ জমির ছোট্ট ঘরে তাঁদের বসবাস।

এই দম্পতি জানান, প্রায় ১৩ মাস আগে ফরিদপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেয় সঙ্গীতা। কিন্তু জন্মের পর নাভি, পেটসহ শরীরের ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ শরীর থেকে আলাদা দেখা যায়। চিকিৎসকেরা তাঁদের জানান, শিশুটি বিরল ও জটিল রোগে আক্রান্ত। দ্রুত অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। দেশেও করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন সাত–আট লাখ টাকা। জেলে শুভঙ্করের দিন আনা দিন খাওয়া অবস্থা। নিজের সামর্থ্যের মধ্যে মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে মেয়ের চিকিৎসা করাতে গত ১৩ মাসে প্রায় চার–পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। অস্ত্রোপচার করার মতো এখন তাঁদের বসবাসের সামান্য ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই।

মা বিজলী ঠাকুর বলেন, ‘জন্মের পর দেখি, সঙ্গীতার লিভারসহ সবকিছু সামনে বের হয়ে আছে। এটা নাকি অনেক জটিল রোগের কারণে হয়। অনেকে আমার সন্তানকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেন। আমি তো মা, আমাকে মানুষ করতেই হবে। ভগবান আমারে এমন সন্তান দিলে কী আর করার আছে। এভাবে কয়েক মাস পর ডাক্তাররা অপারেশন করে চামড়া লাগিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বেরিয়ে থাকা ভেতরের অঙ্গগুলো পেটের ভেতরে ঢোকানো যায়নি। এ জন্য অনেক টাকা লাগবে। তাই মানুষের কাছে সাহায্য চাচ্ছি। সবার দয়ায় যদি আমার সঙ্গীতা ভালো হতে পারে।’

বাবা শুভঙ্কর ঠাকুর বলেন, ফরিদপুরের জাহিদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক এসি পালের তত্ত্বাবধানে সঙ্গীতার চিকিৎসা চলছে। জন্মের পর থেকে ১৩ মাস ধরে প্রতি মাসে দু-তিনবার চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। প্রাথমিকভাবে কিছু চামড়া লাগিয়ে লিভার ঢেকে রাখা হয়েছে। কিছুদিন পর লিভারের ওপর আলাদা চামড়া লাগিয়ে পেটে ঢোকানোর ব্যবস্থা করা হবে। এই অপারেশন করতে সাত-আট লাখ টাকা লাগবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এত টাকা আমি কোথায় পাব? সরকার যদি সঙ্গীতার চিকিৎসার দায়িত্ব নিত, তাহলে সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকতাম।’

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই দম্পতির মেয়ে জটিল রোগে আক্রান্ত। বিষয়টি জানার পর উপজেলা প্রশাসন থেকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। এ ছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তরেও সাহায্যের আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের সরকারি অন্যান্য সুবিধাও প্রদান করা হবে। শিশুটির চিকিৎসায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।