বরিশাল বিভাগীয় ইতিহাস সম্মিলনী হয়ে গেল কুয়াকাটায়

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর প্রতিষ্ঠাতা ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন
ছবি: প্রথম আলো

একটি দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সবার জানা দরকার। সবচেয়ে বেশি জানা দরকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে। আগামীর প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ও চেতনাবোধ ছড়িয়ে দিতে হবে। একটি গর্বিত ও দেশপ্রেমিক জাতি গঠন করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর বরিশাল বিভাগীয় সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে কুয়াকাটা পর্যটন করপোরেশনের সম্মেলনকক্ষে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর প্রতিষ্ঠাতা, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

ইতিহাস বিষয় সম্পর্কে মুনতাসীর মামুন বলেন, সবাই বলে ইতিহাস পড়লে চাকরি পাওয়া যায় না। এটা একদম ভুল কথা। ইতিহাস পড়ে অনেক গুণী মানুষ যেমন তৈরি হচ্ছে, তেমনি ইতিহাস পড়ে অনেকেই প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি করছে। পড়াশোনা ছাড়া শিক্ষক হওয়া যায় না, চাকরি করা যায়। বাসায় শুধু চেকবই নয়, পড়ার বইও রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি ইতিহাসকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছি, যার কারণে ইতিহাস একটা জনপ্রিয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমরা খুলনার গণহত্যা জাদুঘরের মাধ্যমে ১৫০ জন নতুন লেখক তৈরি করেছি। এটাও ইতিহাসচর্চার অগ্রগতি বলে আমি মনে করি।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ইতিহাস পাঠ শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে করলেই হবে না, স্কুল পর্যায়েও ইতিহাস পাঠের উদ্যোগ নিতে হবে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ইতিহাসচর্চাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সব মানুষ যদি ইতিহাস পাঠ করে, ইতিহাস চর্চা করে তাহলে মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম তৈরি হবে।’

বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি খোন্দকার অলিউল ইসলামের সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠনের পটুয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি মো. নাজমুল আলম, ঝালকাঠি জেলা শাখার সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, ভোলা জেলা শাখার সভাপতি জাহান জেব আলম প্রমুখ। সম্মেলনে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন কলেজের ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বাংলা বিভাগের শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান ‘১৯৭১ গণহত্যা: প্রেক্ষিত বরিশাল এবং কতিপয় বৈশিষ্ট্য মূল্যায়ন’, কলাপাড়া মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নেছারউদ্দিন আহমেদ ‘কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা’, আকতার হোসেন চৌধুরী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফৌজিয়া খানম ‘মুক্তিযুদ্ধে ৯ নং সেক্টর: প্রসঙ্গ বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট ফজলুল হক’, নাজিরপুর ইউনাইটেড কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লুলু আল মারজান ‘বরিশালের অসহযোগ আন্দোলনে সাংস্কৃতিক সংগঠনের ভূমিকা’ এবং নাজিরপুর ইউনাইটেড কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক বি এম শহীদুল ইসলাম ‘বরিশালের কৃষক সমাজ ও শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এসব প্রবন্ধের ওপর আলোচকেরা তাঁদের মতামত দেন।