মধুখালীতে ৩৬ দিনেও আতঙ্ক কাটেনি, পরিদর্শনে ঐক্য পরিষদের নেতারা

ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লি গ্রামে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা। আজ শুক্রবার সকালেছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লি গ্রামে দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার ৩৬ দিন পরও বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রেপ্তার এড়াতে গ্রামের পুরুষেরা পালিয়ে বেড়ানোয় বিপাকে পড়েছেন নারীরা। এমন অবস্থায় নিরপরাধ কাউকে হয়রানি না করার আশ্বাস দিয়ে বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পরামর্শ দিয়েছেন মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন।

আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চপল্লি গ্রাম পরিদর্শনে যান বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের ছয় সদস্য। এ সময় ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলা এবং রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং মধুখালী থানার ওসি উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

ঐক্য পরিষদের নেতারা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পঞ্চপল্লি মন্দিরের সামনে আসেন। সেখানে উপস্থিত ওই গ্রামের সমবেত নারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে পঞ্চপল্লি মন্দিরসংলগ্ন পঞ্চপল্লি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক সভা করেন। এ সভা চলে বেলা দুইটা পর্যন্ত।

পঞ্চপল্লি পরিদর্শনের বিবরণ দিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৮ এপ্রিল রাতে এ দুঃখজনক ঘটনার পর ৩৬ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও পঞ্চপল্লিতে আতঙ্কাবস্থা এতটুকু কমেনি। পুলিশ প্রহরা রয়েছে। একাধিক মন্ত্রী ঘটনাস্থল ঘুরে গেছেন। নিরপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না বলে পুলিশের তরফ থেকে বলা হলেও ওই এলাকার ৭০টি পরিবারের সদস্যরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। ফলে এখনো বাড়িগুলো পুরুষশূন্য হয়ে রয়েছে।

কাজল দেবনাথ বলেন, ঘটনা যখন ঘটেছে, তখন কৃষিপ্রধান ওই এলাকায় সবেমাত্র পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছিল। পুরুষেরা না থাকায় নারীরা তা তুলেছেন। পরবর্তী সময়ে পাট রোপণ ও পরিচর্যা করতে সমস্যা হচ্ছে। ওই গ্রামে কৃষিকাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পুরুষশূন্য থাকায় নারীরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আর্থিক সমস্যাসহ এক নিদারুণ মানবেতর দিনযাপন করছেন।

আরও পড়ুন

পঞ্চপল্লি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মতবিনিময়কালে গ্রামের নারীরা জানান, গ্রেপ্তার আতঙ্কের ভয়ে পুরুষেরা এলাকায় আসছেন না। এমনকি স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এলাকাছাড়া।

পঞ্চপল্লি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মতবিনিময়কালে বক্তব্য দেন মধুখালী থানার ওসি মিরাজ হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

এ সময় ওসি মো. মিরাজ হোসেন বলেন, ঘটনার সময় পাওয়া বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় তাদের কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না। জড়িত নয়, এমন কারও নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে না। তিনি পুরুষ সদস্যদের গ্রামে ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপনের পরামর্শ দেন।

ওই সভায় ওসি জানান, এ ঘটনায় দুই ভাইকে হত্যা, মন্দিরের প্রতিমায় আগুন দেওয়া ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় ৩১ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় এজাহারভুক্ত ১৫ জনসহ মোট ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই ভাইয়ের হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাতজনকে।

আরও পড়ুন

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডি এন চ্যাঠার্জী, যুগ্ম সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ ও তাপস পাল, মহিলা ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি ছায়া ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় পূজা পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, ফরিদপুর জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক অলোক সেন, সদস্যসচিব সত্যজিৎ মুখার্জী, পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ফরিদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিধান সাহা, রাজবাড়ী পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি প্রদীপ্ত চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার দাস প্রমুখ। ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পঞ্চপল্লির ঘটনা নিয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারের সঙ্গে মতবিনিময় করার কথা।