সেই নারী স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছেন, আবার বিয়ে করেছেন: পুলিশ

হাসি বেগম
ছবি: সংগৃহীত

‘দাফনের’ দুই দিন পর ফোন করে জীবিত থাকার কথা জানানো ফরিদপুরের সদরপুরের নারী হাসি বেগম (২৪) স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছিলেন এবং আবার বিয়ে করেছেন বলে পুলিশ বলছে। পুলিশের ভাষ্য, ওই নারী আগের স্বামীর কাছে ফিরতে চান না। এ কারণে আজ বুধবার আদালতের মাধ্যমে তাঁকে বাবার কাছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।  

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আট বছর আগে সদরপুরের মোতালেব শেখের সঙ্গে একই উপজেলার হাসি বেগমের বিয়ে হয়। তাঁদের ৭ বছর বয়সী একটি ছেলেসন্তান আছে। ৭ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার কথা বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হন হাসি বেগম। এর পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। এ ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর হাসি বেগমের বাবা শেখ হাবিবুর রহমান সদরপুর থানায় একটি অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর মেয়ে হাসি বেগমকে হত্যা করে লাশ গুম করেছেন জামাতা মোতালেব শেখ।

শ্বশুরের অভিযোগের পর ১৪ সেপ্টেম্বর হাসি বেগমের স্বামী মোতালেব শেখ বাদী হয়ে সদরপুর থানায় পাল্টা আরেকটি অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, হাসি বেগম টাকাসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে বাবার বাড়িতে পালিয়ে গেছেন।

২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সদরপুর উপজেলা–সংলগ্ন ভাঙ্গা উপজেলার আদমপুর এলাকায় কচুরিপানার ভেতর থেকে এক নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে হাসির বাবা শেখ হাবিবুর ও মা সালমা বেগম গিয়ে লাশটি তাদের মেয়ের নয় বলে জানান। তখন লাশটি নিয়ে যায় ভাঙ্গা থানার পুলিশ। পরদিন হাসির বাবা ও ফুপু নিহারণ বেগম থানায় যান। পায়ের আঙুল ছোট ও গলায় তাবিজ থেকে লাশটি হাসির বলে শনাক্ত করেন। ময়নাতদন্তের পর পুলিশ লাশটি হাসির বাবার হাতে তুলে দেন ২৩ সেপ্টেম্বর। ওই দিন সন্ধ্যায় সদরপুরের শৌলডুবী মদিনাতুল কবরস্থানে লাশের দাফন হয়।

দাফনের খবর কোনোভাবে পান হাসি বেগম। তিনি মা-বাবাকে ফোন করে বলেন, ‘আমি বেঁচে আছি’। এই কথা হাসির বাবা পুলিশকে জানান। পরে সদরপুর থানার পুলিশ ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর হাসি বেগমকে জীবিত উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মামুন আল রশিদ বলেন, হাসি বেগমের বাবা জামাতার নামে যে মামলা করেছিলেন, হাসিকে উদ্ধারের পর সেটার প্রতিবেদন দেওয়া হয়। পুলিশকে হাসি বলেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়েছিলেন। নান্দাইলে এক তরুণকে বিয়ে করেছেন। কিন্তু তাঁর এ বক্তব্য গ্রহযোগ্য নয়। কারণ, তিনি বিবাহিত এবং স্বামীকে তালাক দেননি। তিনি স্বামী মোতালেবের কাছে ফিরে যেতে চান না বলে তাঁর বাবার কাছে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

অর্ধগলিত যে লাশটি হাসি বেগমের হিসেবে শনাক্ত করে দাফন করা হয়, সে বিষয়ে ভাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা করা হবে।

ভাঙ্গা থানার ওসি জিয়ারুল ইসলাম বলেন, হাসি বেগম জীবিত অবস্থায় ফিরে আসায় জানা গেল, দাফন করা লাশটি তাঁর নয়। এ অবস্থায় একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে আশার কথা হলো, পুলিশের পক্ষ থেকে মৃতের ডিএনএ সংরক্ষণ করা হয়েছে। আশপাশের থানায় নিখোঁজ সংবাদের তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনে যথাযথ চেষ্টা করা হবে।

হাসি বেগমের মা সালমা বেগম বলেন, মোতালেব বিয়ের তিন বছর পর দুবাই যান। ১১ মাস আগে ফিরে আসেন শূন্য হাতে। যাঁদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, বাড়িতে এসে জমি বিক্রি করে সেই দেনা শোধ করতে হয়েছে তাঁকে।