ফরিদপুরে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নির্বাচনের প্রস্তুতি ও ফেসবুক প্রচারণা
ফরিদপুরের মধুখালীতে আলোচনায় এসেছেন এক কারারুদ্ধ আসামি। হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মির্জা মাঝহারুল ইসলাম ওরফে মিলন কারাগারে থেকেও আসন্ন মধুখালী বাজার ব্যবসায়ী পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। শুধু তা–ই নয়, তাঁর নামে খোলা ফেসবুক আইডি থেকে চলছে নির্বাচনী প্রচারণাও।
মির্জা মাঝহারুল ইসলাম মধুখালী বাজার এলাকার বাসিন্দা, প্রয়াত মির্জা আকরামুজ্জামানের ছেলে। তিন ভাই–বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তিনি ফরিদপুর চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়ন এবং মধুখালী বাজার ব্যবসায়ী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পাশাপাশি জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যও ছিলেন।
গত ১০ জুলাই ফরিদপুর জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক চিনিকলশ্রমিক শাহ মোহাম্মদ রাজন হত্যা মামলায় মির্জা মাঝহারুল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার পরপরই তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সাজা ঘোষণার দিনই তাঁর ফেসবুক আইডি ‘মির্জা মিলন’ থেকে শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্দেশে লেখা হয়, ‘হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমি নির্দোষ, আইনের মধ্য দিয়ে আপনাদের মাঝে ফিরে আসব।’
এর পর থেকে তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হচ্ছে। গত ২৫ আগস্ট আইডি থেকে তিনটি পোস্ট দেওয়া হয়। প্রথম পোস্টে লেখা হয়, ‘আমি আপনাদের মির্জা মাঝহারুল ইসলাম মিলন। বিগত নির্বাচনে এই মধুখালী বাজার ব্যবসায়ীদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। আসন্ন নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে আপনাদের সবার সহযোগিতা, দোয়া ও আশীর্বাদ একান্তভাবে কামনা করছি।’
অন্য দুটি পোস্ট ছিল পোস্টার আকারে। বড় করে নিজের ছবি ব্যবহার করে সেখানে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয় এবং মধুখালী বাজার ব্যবসায়ীদের কাছে ‘দোয়া, আশীর্বাদ ও সমর্থন’ কামনা করা হয়।
আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর এই নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়ন ফরম কেনার শেষ দিন। ওই দিন বিকেলে মির্জা মাঝহারুল ইসলামের বড় ভাই মির্জা শাহরিয়া লোটাস তাঁর হয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন ফরম কেনেন। মনোনয়ন ফরম কেনার ছবি একই ফেসবুক আইডিতে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আপলোড করা হয়। ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘আমার প্রিয় মধুখালী বাজার ব্যবসায়ীবৃন্দ, আসন্ন নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন কিনতে বাধা দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত আপনাদের দোয়া-আশীর্বাদে মনোনয়ন কিনতে পেরেছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।’
এ বিষয়ে মধুখালী বাজার ব্যবসায়ী পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আবু সাঈদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিষদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে নিম্ন আদালতের রায় যদি উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে স্থগিত হয়, তাহলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন যদি রায়ের স্থগিতাদেশ না থাকে, তাহলে বাছাইপর্বে মনোনয়ন বাতিল হবে।’
কারাগারে থেকেও মির্জা মাঝহারুল কীভাবে ফেসবুক ব্যবহার করছেন—এ প্রশ্নে ফরিদপুর কারাগারের সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কারাগারে থেকে কোনো কয়েদির ফেসবুক ব্যবহার করার সুযোগ নেই।’ প্রথমে তিনি বিষয়টিকে ‘ফেক আইডি’ বলে মন্তব্য করলেও পরে জানান, সম্ভবত ওই আইডি অন্য কেউ ব্যবহার করছেন।
এদিকে মির্জা মাঝহারুলের ভাই মির্জা শাহরিয়া দাবি করেছেন, তাঁর ভাই উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। তাই নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো বাধা নেই। ফেসবুক আইডি ব্যবহারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিলনের ফেসবুক আইডি বর্তমানে ব্যবহার করছেন তাঁর ছেলে মুগ্ধ। বাবার অবর্তমানে ছেলে বাবার আইডি ব্যবহার করছেন।
তবে আইনজীবীরা বিষয়টি আইনের লঙ্ঘন ও অপরাধ বলে জানিয়েছেন। ফরিদপুর জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজনের ফেসবুক আইডি অন্যজন কোনো অবস্থাতেই ব্যবহার করতে পারেন না। আর কারারুদ্ধ ব্যক্তির ক্ষেত্রে তো প্রশ্নই ওঠে না। এটা সাইবার নিরাপত্তা আইনে অপরাধ এবং এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’
আরেক আইনজীবী মানিক কুমার মজুমদার বলেন, ‘কেউ কারাগারে থাকলে তাঁর নামে ফেসবুক ব্যবহার করা হলে সেটা ফেক আইডি হয়ে যায়। ফেক আইডি ব্যবহার করা আইনগতভাবে দণ্ডনীয়। পুলিশ চাইলে এ বিষয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা নিতে পারে।’