কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় জজ মিয়া হত্যা মামলায় একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার বেলা তিনটায় কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক রোজিনা খান এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন উপজেলার হোমনা সরদার বাড়ির বাহাদুর মিয়ার ছেলে আজাদ মিয়া (৩৫)।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২২ মে সন্ধ্যায় জজ মিয়া বিদ্যুৎ না থাকায় ও প্রচণ্ড গরমে বাড়ির পাশে পৌর নতুন বাসস্ট্যান্ড খোলা মাঠে বসে মোবারক মিয়াসহ অন্যদের সঙ্গে গল্পগুজব করছিলেন। এ সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে আসামিরা এলোপাতাড়ি কিল–ঘুষি–লাথি মারেন এবং একপর্যায়ে ছুরি দিয়ে বুকের বাঁ পাশে আঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যান। পরে সিএনজিচালক জামির ও দেলোয়ার আহত জজ মিয়াকে মুমূর্ষু অবস্থায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জজ মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। তাঁর লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে হোমনা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ছুরির ভাঙা হাতলের অংশ, রক্তমাখা দূর্বাঘাস ও মাটি জব্দ করেন। এরপর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। এ ব্যাপারে পরদিন ২৩ মে মৃতের বড় ভাই আনোয়ার আলীর ছেলে মো. জুলহাস (৪২) বাদী হয়ে একই উপজেলার হোমনা সরদার বাড়ির বাহাদুর মিয়ার ছেলে আসামি আজাদ মিয়া, সালা উদ্দিন, নাসির উদ্দিনসহ তিন–চারজনকে আসামি করে হোমনা থানায় মামলা করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কাজী নাজমুল হক ২৮ মে আসামি আজাদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর আসামি আজাদ মিয়া, সালাউদ্দিন ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০১৬ সালে ১৪ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন করা হয়। পরে ২৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং আসামি আজাদ মিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির আলোকে আজাদ মিয়াকে মৃত্যুদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন। অপর দুই আসামি সালাউদ্দিন ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁদের খালাস দেন।
রায় ঘোষণাকালে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আজাদ মিয়াসহ অন্য দুই আসামিও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পিপি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, আশা করছি মহামান্য হাইকোর্ট এ রায় বহাল রাখবেন।