বগুড়ায় এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন করা হচ্ছে, দুর্ভোগ–দুর্ঘটনার আশঙ্কা
বগুড়া শহরের সাতমাথায় বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার এলাকায় শেরপুর সড়ক মোড়ের প্রবেশপথের পাশে বাণিজ্যিক পণ্যের প্রচারের জন্য স্থাপন করা হচ্ছে এলইডি বিলবোর্ড। গত শনিবার থেকে বিশাল আকৃতির বিলবোর্ডটি স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটি নির্মাণের জন্য মাটি ও বালু স্তূপ করে রাখায় সড়ক সরু হয়ে গেছে। দেখা দিচ্ছে যানজট ও দুর্ভোগ। সেই সঙ্গে রাতের বেলায় এলইডি বিলবোর্ডের তীক্ষ্ণ আলোর কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন পথচারী ও যানবাহনের চালকেরা।
বিদেশি সাহায্য সংস্থা সুইস কন্টাক্টের প্রবৃদ্ধি প্রকল্প থেকে বরাদ্দ দেওয়া ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বিলবোর্ডটি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বগুড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মাসুম আলী বেগ প্রথম আলোকে বলেন, এখানে প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই গত ৪ মার্চ মেয়র ও কাউন্সিলররা মিলে সুইস কন্টাক্ট থেকে বরাদ্দ দেওয়া ৩৩ লাখ ৩১ হাজার ৮৫৩ টাকায় এলইডি বিলবোর্ড স্থাপনে পৌর পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুযায়ী, স্থান নির্ধারণও করা হয়েছে। গত ১৮ জুলাই ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিয়েছেন তাঁরা। কার্যাদেশ অনুযায়ী, আগামী বছরের ২৪ জুনের মধ্যে এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা।
গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সরেজমিনে এলইডি বিলবোর্ড স্থাপনের জন্য মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করতে দেখা গেছে। মোটা দুটি বড় ধাতব খুঁটি স্থাপনে খুঁটির গোড়ায় ইট-সিমেন্টের ঢালাই দেওয়া হয়েছে। সড়কের পাশে মাটি ও বালু স্তূপ করে রাখা। এতে সড়ক সংকুচিত হয়ে সেখানে থেমে থেমে যানজট তৈরি হচ্ছে। এই বিলবোর্ড স্থাপনে নিয়ম ও নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ তুলেছেন কয়েকজন।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) বগুড়া জেলা শাখার সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এলইডি বিলবোর্ড স্থাপনে যথাযথভাবে নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। এতে যানজটপ্রবণ সাতমাথা এলাকায় যান চলাচলের পথ আরও সংকোচিত হবে। এলইডি স্ক্রিন রাতের বেলা যানবাহনের চালকদের সমস্যা করবে।
বগুড়া পৌরসভার নগর–পরিকল্পনাবিদ আল মেহেদী হাসান বলেন, যেখানে বিলবোর্ড স্থাপনের কাজ চলছে, ওই জায়গা নির্ধারণ করেছে এলইডি স্থাপন আহ্বায়ক কমিটি। স্থান নির্ধারণে নগর–পরিকল্পনাবিদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি।
শেরপুর সড়ক মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় অটোরিকশাচালক কমর উদ্দিনকে। আলাপকালে তিনি বলেন, সাতমাথায় দিনে-রাতে এমনিতেই যানজট লাগে। সেখানে সড়কের ওপর বিলবোর্ড স্থাপনের কাজ চলায় সড়ক সরু হয়ে গেছে। এর ফলে প্রায়ই যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ব্যক্তিগত গাড়িচালক হেলাল মিয়া বলেন, ব্যস্ততম সড়কের মোড়ে এভাবে এত বিশাল এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন করলে রাতের বেলা গাড়ি চালাতে ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে। বিশেষ করে রাত ১০টার পর শহরের ভেতর দিয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দূরপাল্লার বাস চলাচল করে। এলইডি বিলবোর্ডের তীক্ষ্ণ আলো গাড়িচালকের চোখে পড়বে, এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়বে।
সাতমাথা যানজটপ্রবণ এলাকা বলে উল্লেখ করেন সনাকের বগুড়া শাখার সভাপতি মাসুদার রহমান হেলাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে আগে থেকেই কয়েকটি এলইডি বিলবোর্ড আছে। শুধু আয় বাড়ানোর জন্য সড়কের ওপর নতুন করে এভাবে এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন করে শহরবাসীকে দুর্ভোগে ফেলে দেওয়া পৌর কর্তৃপক্ষের চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। ২১টি ওয়ার্ডবিশিষ্ট এ পৌরসভায় লাখ লাখ বাণিজ্যিক, আবাসিক ও শিল্পশ্রেণির হোল্ডিং এবং ট্রেড লাইসেন্স থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়। এ ছাড়া হাটবাজার, স্ট্যান্ড ইজারাসহ আয়ের বিভিন্ন উৎস আছে। এমনিতেই শহরে যানজটের সমস্যা প্রকট। যানজট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ না করে পৌরসভা শুধু টাকার জন্য রাস্তা দখল করে বিলবোর্ড স্থাপন করছে, যা শহরের ১০ লাখ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বগুড়ার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. সালেকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্যিক পণ্যের প্রচারণায় সাতমাথায় সড়কের ওপর এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন না করার জন্য ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে পৌরসভায় আপত্তি জানানো হয়েছিল। কিন্তু ট্রাফিকের সেই আপত্তি আমলে না নিয়ে সড়কের ওপর এলইডি বিলবোর্ড স্থাপনের কাজ চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, সাতমাথায় এলইডি বিলবোর্ড স্থাপনে স্থান নির্ধারণ করেছে পৌর পরিষদ। উল্টো প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, সাতমাথায় দিনে-রাতে ফুটপাত দখল করে হকার বসছেন, তালা–চাবির দোকানি বসছেন। ফলের দোকান বসছে। বিকেল গড়াতে না গড়াতে সড়কের ওপর শত শত ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসছে। তাতে যদি সদস্যা না হয়, তবে এলইডি বিলবোর্ড স্থাপনে সমস্যার প্রশ্ন উঠছে কেন?
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) পি এম ইমরুল কায়েস প্রথম আলোকে বলেন, সাতমাথায় সড়কের ওপর এলইডি বিলবোর্ড স্থাপনে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না, তা সরেজমিনে দেখে জেলা প্রশাসককে অবগত করা হবে। প্রয়োজনে বিলবোর্ড স্থাপন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে পৌরসভাকে বলা হবে।