আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই কার্যালয় গত রোববার রাতে দখল করে ‘চর উন্নয়ন কমিটি’র সাইনবোর্ড লাগানো হয়। পরে এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হলে সাইনবোর্ডটি গতকাল সোমবার রাতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
উলিপুর উপজেলা চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক সোলায়মান আলী সরকার আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও চর উন্নয়ন কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি পৌর বাজার এলাকায় খাসজমিতে অবস্থিত। একসময় এই কার্যালয়ের জায়গায় ‘জাগরণী’ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের কার্যালয় ছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জায়গাটি দখল করে সেখানে দলীয় কার্যালয় তৈরি করে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে কার্যালয়টি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ছাত্র-জনতা। এর পর থেকে ওই কার্যালয়টিতে স্থানীয় ব্যবসায়ী, পথচারীরা প্রস্রাব করতেন। এতে বাজার ও মসজিদগামী লোকজন গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। সামাজিক কাজের জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পরামর্শে চর উন্নয়ন কমিটি আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সাইনবোর্ড লাগায়। পরে সমালোচনার মুখে এক দিনের ব্যবধানে সেটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
উলিপুর উপজেলা চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান আলী সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চর উন্নয়ন কমিটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আওয়ামী লীগ ব্যতীত সব দলের মানুষকে নিয়ে এটি গঠন করা হয়েছিল। আমিসহ কমিটির বেশির ভাগ সদস্য বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই অনেকেই আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সামাজিক সংগঠনের ব্যানার লাগানোকে বিএনপির দখল হিসেবে প্রচার করতে থাকেন। দলের জন্য বিষয়টি বিব্রতকর। পরে আমরা দলের সম্মান রক্ষায় ব্যানার খুলে ফেলেছি।’
সোলায়মান আলী আরও বলেন, ‘ওই জায়গাটি সরকারি সম্পত্তি। আওয়ামী লীগ সেটি দখল করে দলীয় কার্যালয় তৈরি করেছিল। আমরা ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ওই জায়গাটি বৈধভাবে বন্দোবস্ত নেওয়ার জন্য আবেদন করেছি।’
সম্প্রতি চরবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবিতে কুড়িগ্রামে চর উন্নয়ন কমিটি গঠন করা হয়। কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সদস্য আশরাফুল হককে সদস্যসচিব করে চর উন্নয়ন কমিটির কুড়িগ্রাম জেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগ ব্যতীত সব দলের লোকদের নিয়ে চর উন্নয়ন কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিএনপি নেতা-কর্মীদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার প্রায় সব উপজেলায় বিএনপি দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সংগঠনটি সভা-সমাবেশ করছে।