আহসানুল হকের অনিয়ম–দুর্নীতি নিয়ে সরব স্বতন্ত্র প্রার্থী

রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক ওরফে ডিউক চৌধুরীর সামনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ সরকার ওরফে বিটু। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি ও তাঁর সমর্থকেরা সংসদ সদস্যের দুর্নীতি তুলে ধরে বক্তব্য দিচ্ছেন।

এ ছাড়া সংসদ সদস্য তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেন না, এমন অভিযোগ আগেই উঠেছিল। এখন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটি অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

সংসদ সদস্য আহসানুল হক গত দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ সরকার কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক ট্রাক। ভোটের মাঠে আরও আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনিছুল ইসলাম।

নৌকার প্রার্থী আহসানুল হকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর অভিযোগ, টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় টিআর-কাবিখায় ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ, টাকা নিয়ে বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ সরকারীকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পারিবারিকীকরণ, পুকুর–জলাশয় ইজারা প্রদানে হস্তক্ষেপ ইত্যাদি।

এ ছাড়া সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ হলো, তিনি দলের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেন না, দলীয় বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেন না, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় থাকেন না, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অবৈধ সুবিধা নিয়ে পছন্দের লোকজনকে দলীয় প্রতীক দিয়েছেন ইত্যাদি।

এসব অভিযোগ নির্বাচনী প্রচারণায় তুলে ধরে বক্তব্য দিচ্ছেন নৌকার প্রার্থী আহসানুল হকের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী। তবে আহসানুল হক বলেন, ‘বিরোধিতাকারীরা কখনোই আমার সঙ্গে ছিল না। এদের কাজই হচ্ছে বিরোধিতা করা। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলে নির্বাচনী সভা-সমাবেশে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, তা সঠিক নয়। ভোটাররা এসব আমলে নিচ্ছে না।’

মাস তিনেক আগে বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাজেদ আলী খান সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে কলেজটি সরকারীকরণের অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। এর আগে ২০১৭ সালে বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক টুটুল চৌধুরী ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগের নেতারা সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে টিআর কাবিখায় লুটপাট, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক–কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাটসহ দলীয় কমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতা ও দলীয় নেতা–কর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন।

দীর্ঘদিন ধরেই দলের অনেক নেতা সংসদ সদস্য আহসানুল হকের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব। তাঁদের অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আজিজার রহমান, সাবেক দপ্তর সম্পাদক বিমলেন্দু সরকার, কৃষক লীগের উপজেলা সভাপতি সুনীল চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক নুর আলম, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফিউর রহমান, জেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক প্রাণকৃষ্ণ গোস্বামী, সদস্যসচিব সহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সদস্য লুৎফর রহমান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও রংপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য সুমনা আক্তার, তারাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সদস্য আনিছুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জালাল উদ্দিন প্রমুখ।

পারিবারিক কোন্দলেও ভুগছেন সংসদ সদস্য আহসানুল হক। তাঁর চাচা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাবলু চৌধুরী, জাহিদুল হক চৌধুরী ও চাচাতো ভাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পলিন চৌধুরী এবারের নির্বাচনে তাঁর পক্ষে নৌকার সমর্থনে মাঠে নামেননি। এর আগের নির্বাচনগুলোয় তাঁরা নৌকার পক্ষে মাঠে সক্রিয় ছিলেন।

বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এ কারণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ সরকারের ট্রাক প্রতীকের সমর্থনে মাঠে কাজ করছেন। নির্বাচনের মাঠে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন ডিউক চৌধুরী। তবে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই। ক্ষোভ হচ্ছে সংসদ সদস্যের প্রতি।’

স্বতন্ত্রপ্রার্থী বিশ্বনাথ সরকার বলেন, ‘এমপি ডিউক চৌধুরী উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছেন। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। তাঁর স্বেচ্ছাচারিতা ও অবজ্ঞার কারণে দলীয় নেতা–কর্মীরাও আমার ট্রাকের পক্ষে মাঠে নেমে পড়েছেন।’