‘শ্যাষ বয়সেও আগুন-পানি মোক ছাড়িল না’
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় অগ্নিকাণ্ডে এক কৃষকের তিনটি ঘর পুড়ে গেছে ও অগ্নিদগ্ধ হয়েছে দুটি গরু। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের গান্নারপাড় গ্রামে কৃষক দুদু মিয়ার (৬৫) বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও দুদু মিয়ার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গান্নারপাড় গ্রামের দুদু মিয়া একসময় বড় কৃষক ছিলেন। চাষাবাদ করে চলত তাঁর সংসার। দফায় দফায় তিস্তা নদীর ভাঙনে জমিসহ ঘর ভেঙে নদীতে ভেসে যায়। কৃষক থেকে দিনমজুরি শুরু করেন তিনি। শেষসম্বল তিস্তার ধারে থাকা ৪ শতক জমিতে টিনের ঘর করে বসবাস শুরু করেন। এবারে বন্যায় ঘরে পানি ওঠায় স্কুলে ঠাঁই নিয়েছিলেন তিনি। পানি নেমে গেলে ফের ঘরে ফিরে সংসার পাতেন।
আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দুদু মিয়া ও তাঁর ছেলে শাকিল হোসেন মজুরির টাকা আনতে হাটে যান। রান্না উঠিয়ে তাঁর (দুদু মিয়া) স্ত্রী আদুরী বেগম বাইরে বের হন। ঘরের ঢোকার আগেই আদুরী বেগম দেখতে পান রান্নাঘরে আগুন জ্বলছে। দ্রুত এ আগুন পাশের দুটি ঘরে লেগে যায়। এতে তিন লাখ টাকার মালামাল পুড়ে যায়। দুটি গরুও আগুনে ঝলসে যায়। আদুরীর চিৎকারে আশপাশের মানুষ ছুটে গিয়ে বালতি, জগ, বদনায় করে নদী থেকে পানি তুলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর গঙ্গাচড়া ফায়ার সার্ভিসের একদল কর্মী সেখানে পৌঁছান।
তিলে তিলে গড়ে তোলা ঘরে আগুনে পুড়তে দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন আদুরী। জ্ঞান ফিরলেই বিলাপ করছিল, ‘মোর আর কিছু থাকিল না। সউগ আগুনোত শ্যাষ হয়া গেল। এ্যালা কোনটে থাকিম। কেমন করি বাঁচিম।’
আগুনে ঝলসে যাওয়া গাভি ও ছাগলের পাশে দাঁড়িয়ে কান্নারত কণ্ঠে দুদু মিয়া বলেন, ‘কয় দিন আগোত বানোত ঘর তলে গেছলো। ভাঙতে ভাঙতে তিস্তা মোক ফকির বানাইছে। আর এ্যালা আগুন ঘরহারা নিঃস্ব বানাইল। মাটি কামড়ে তিস্তার চরোত ঘর বানেয়া আনা সুখী থাকির চাছনুং। তাক আর হইল না। মোর কপালোতে সুখ নাই। শ্যাষ বয়সেও আগুন-পানি মোক ছাড়িল না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদ উদ্দিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গান্নারপাড় এলাকার দিনমজুর দুদু মিয়ার বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনাটি শুনেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আগামীকাল বুধবার উপজেলা পরিষদে আসতে বলা হয়েছে। সরকারিভাবে তাঁদের সহায়তা করা হবে।