বিচারহীনতার ২৫ বছর, জড়িতরা শনাক্ত হয়নি

১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ সম্মেলনের শেষ দিন পরপর দুই দফায় বোমার আঘাতে শিল্পীসহ ১০ জন নিহত ও আড়াই শতাধিক মানুষ আহত হন।

যশোরে উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলার ২৫ বছরেও জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যায়নি। আদালতে ঝুলে রয়েছে মামলার বিচারকাজ। বিচার কার্যক্রম কবে শুরু হবে, তা কেউ জানেন না। যদিও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রতিবছরের মতো এবারও বলেছেন, তাঁরা উদ্যোগ নিচ্ছেন মামলার আপিল শুনানি শুরু করার।

৬ মার্চ ‘যশোর হত্যাকাণ্ড দিবস’ হিসেবে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে। দিনটিকে ‘উদীচী ট্র্যাজেডি দিবস’ও বলা হয়। আজ বুধবার দিবসটি পালন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ‘বিচারহীনতার ২৫ বছর’ শিরোনামে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী যশোর জেলা সংসদ নিজস্ব কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন যশোর উদীচীর সভাপতি তন্দ্রা ভট্টাচার্য।

সভায় মূল ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সংগঠনের সহসভাপতি আবদুল আফফান ভিক্টর। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দেশে বেশ কিছু ঘটনার বিচার হলেও যশোরের উদীচী হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। বিচার করতে না পারার রাষ্ট্রের একটি দুর্বলতা। সেই দুর্বলতার সুযোগেই জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো তাদের বিস্তার ঘটিয়েছে। ২৫ বছর ধরে যে বিচারহীনতার আবর্তে আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি, তা পেছনে ফেলে আবার ঘটনার সঠিক তদন্ত করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা ও বিচার করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিন বাউল গানের অনুষ্ঠানে পরপর দুই দফায় মঞ্চের নিচে শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বোমার আঘাতে শিল্পীসহ ১০ জন নিহত ও আড়াই শতাধিক মানুষ আহত হন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন নূর ইসলাম, নাজমুল হুদা, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় ও রামকৃষ্ণ। দীর্ঘদিনেও বিচার না হওয়ায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে।

উদীচীর সম্মেলনে সেই বোমা হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরবর্তী সময়ে অভিযোগ গঠনের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তরিকুল ইসলামকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেন উচ্চ আদালত। ২০০৬ সালের ৩০ মে মামলার রায়ে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেন যশোরের বিচারিক আদালত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) এম ইদ্রীস আলী বলেন, ‘উদীচী হত্যা মামলাটির রায়ের পর সরকার উচ্চ আদালতে আপিল করলে আসামিদের নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করান নির্দেশ দেন। আসামিরা নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়েছেন। এখন রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। আদালত আশ্বাস দিয়েছিলেন মামলাটি যাতে দ্রুত শুনানি হয়, সেই পদক্ষেপ নেবেন। তবে এখনো শুনানি শুরু হয়নি।’

ওই বোমা হামলায় এক পা হারান সুকান্ত দাস। ঘটনার সময় তিনি স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। এখন তাঁর বয়স ৪৪ বছর। সুকান্ত দাস বলেন, ‘ঘটনা ঘটেছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। পরবর্তী সময়ে সেই আওয়ামী লীগ আরও চারবার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এত বছরেও হত্যাকাণ্ডের বিচার হলো না। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির কথা বলি। সেই স্বাধীনতার পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকতেও যখন বিচার হয় না, তখন খুব কষ্ট লাগে।’ সরকারের সদিচ্ছা দেখালে উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হবে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে উদীচী ট্র্যাজেডির ২৫ বছর উপলক্ষে আজ বিকেলে টাউন হল মাঠে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ, শহীদ বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, প্রতিবাদী মিছিল, আলোচনা সভা ও মশাল প্রজ্বালনের কর্মসূচি পালিত হবে।