বঙ্গোপসাগরে ৬ ট্রলারসহ ১০২ জেলে নিখোঁজ, দুশ্চিন্তায় স্বজনেরা

বঙ্গোপসাগর
ফাইল ছবি

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বরগুনা সদর উপজেলার নলী বন্দর বাজারের ৬টি ট্রলারসহ ১০২ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। গত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে জেলেদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছেন তাঁদের স্বজনেরা। এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে ঝড় ও সাগর উত্তাল থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে জেলে পরিবারগুলো।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার আজগরকাঠি এলাকার ছয়টি ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে। ট্রলারগুলো হলো, এফবি সৈকত, এফবি কেয়া, এফবি জুনাইদ, এমভি তাসলিম, এমভি জোসনা ও সোনারতরী। এসব ট্রলারে ১০২ জন জেলে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

নিখোঁজ ট্রলারের মালিক ও জেলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সকালে ১০২ জন জেলে নিয়ে ৬টি ট্রলার খাদ্যসামগ্রী ও প্রয়োজনীয় জ্বালানি নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারের জন্য রওনা দেয়। বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলেদের সঙ্গে তাঁদের স্বজনেরা মুঠোফোনে কথা বলেছেন। তবে ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে তাঁদের মুঠোফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে নিরাপদে কূলে ফিরে এসেছে শেফালী নামের ট্রলারের মাঝি হানিফ। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে সাগরের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। পরে সেখান থেকে দ্রুত ট্রলার চালিয়ে ফেরার চেষ্টা করি। পরদিন সকাল সাড়ে নয়টায় আমি নেটওয়ার্কের মধ্যে আসি। এ সময় আমি অসংখ্য ট্রলার সাগরে অবস্থান করতে দেখেছি।’

জেলে আলী হোসেনের মা মিনারা বেগম বলেন, তাঁর ছেলে গত মঙ্গলবার একটি ট্রলারে করে বঙ্গোপসাগরের মাছ ধরতে যান। সাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে তাঁরা নিখোঁজ হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁর সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে লোক পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আজ শনিবার পর্যন্ত কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

কাঁঠালতলী গ্রামের নিখোঁজ জেলে ফোরকানের স্ত্রী বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ি থেকে রওনা হওয়ার পর সাগরের নামার আগ পর্যন্ত তাঁর (ফোরকান) সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। এর পর থেকে আর কোনো কথা হয়নি। আমার স্বামীর ভাগ্যে কী ঘটছে, জানি না। আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমার স্বামী। দুই ছেলে–মেয়ে ও শাশুড়িকে নিয়ে আমি এখন দুশ্চিন্তায় আছি।’

এফবি সৈকত ট্রলারের মালিক সুলতান আহমেদ বলেন, ১৭ জন জেলে তাঁর ট্রলারটি নিয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে সাগরে মাছ ধরতে যায়। সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন পর মাছ ধরা শেষে জেলেরা ফিরে আসেন। কিন্তু বুধবার থেকে তাঁদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি ইমরুল কায়েস প্রথম আলোকে বলেন, সমিতির ৬টি ট্রলারসহ ১০৬ জন জেলের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারগুলো নিখোঁজ হয়েছে। নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে তিনি কোস্টগার্ডের সহযোগিতা কামনা করেন।

জানতে চাইলে পাথরঘাটা কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাগরের ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলার ও জেলে নিখোঁজের বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় আমরা উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে পারছি না। আবহাওয়ার স্বাভাবিক হলে আমরা উদ্ধার অভিযান চালাব।’