‘হাত জোড় করে মিনতি করছি, আমার মেয়েটাকে নিয়ে কাটাছেঁড়া করিয়েন না’

মেয়ে হাসি মণির লাশ কাটাছেঁড়া না করতে পুলিশের কাছে অনুরোধ করেন মা শরিফা বেগম। শুক্রবার বিকেলে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

‘আমার ছোট্ট মেয়েটা তো ভুল করে ফেলেছে স্যার। ওকে মাফ করে দেন। আপনাদের কাছে আমি হাত জোড় করে মিনতি করছি, আমার মেয়েটাকে আপনারা নিয়ে গিয়ে কাটাছেঁড়া করিয়েন না।’ হাসি মণির (১৫) লাশ যখন ময়নাতদন্তের জন্য গাড়িতে ওঠানো হচ্ছিল, তখন পুলিশের উদ্দেশে এভাবে আকুতি জানাচ্ছিলেন মা শরিফা বেগম (৩৮)। ঘটনাটি শুক্রবারের, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামের।

হাসি মণি ওই গ্রামের হাবিবুর রহমান ও শরিফা বেগম দম্পতির মেয়ে। দুই ভাইবোনের মধ্যে হাসি মণি বড়। হাবিবুর রহমান মালদ্বীপপ্রবাসী। সাত বছর ধরে তিনি সেখানে আছেন। দুই সন্তান নিয়ে শরিফা বেগম গ্রামে থাকেন।

থানা–পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাসি মণি নবম শ্রেণিতে পড়ত গঙ্গাচড়া হাজি দেলোয়ার হোসেন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে নিজ শয়নঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় পাশে পড়ে ছিল একটি চিরকুট।

চিরকুটটি এখন পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। পুলিশ জানায়, ওই চিরকুটে এক ছেলের সঙ্গে মেয়েটির সম্পর্ক এবং ছেলেটিকে কিছু টাকা পাঠানোর কথা লেখা রয়েছে।
মৃত হাসি মণির ছোট ভাই সজীব হোসেন (১৩) জানায়, সে মসজিদে ছিল। তার মা–ও ছিল বাড়ির বাইরে। পরে মা এসে দেখেন, আপু (হাসি) ঘরের ভেতরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

হাসি মণি
ছবি: সংগৃহীত

মৃত হাসি মণির মা শরিফা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘আমি কিচ্ছু জানি না, কেন ও (হাসি মণি) আমাকে ছেড়ে চলে গেল। এখন আমি কাকে মা বলে ডাকব।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল খালেক বলেন, ‘শুনেছি, হাসি মণির সঙ্গে অনেক দিন ধরে এক ছেলের প্রেম ছিল। ছেলেটি বিয়ের আশ্বাস দিয়ে অনেক টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে। বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসার কথা বলে মেয়েটির কাছে সেই ছেলে বিকাশের মাধ্যমে আরও ছয় হাজার টাকা নেয়। কিন্তু ছেলেটি আর বাড়িতে আসেনি। এমনকি যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়। এর পর মেয়েটি অভিমানে আত্মহত্যা করে।’

গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল হোসেন বলেন, বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আপাতত এ ঘটনায় থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। উদ্ধার করা চিরকুটে লেখার মূল কথা হচ্ছে, মেয়েটির সঙ্গে এক ছেলের সম্পর্ক ছিল এবং মেয়েটি ওই ছেলেকে কিছু টাকাও পাঠিয়েছে। বিভিন্ন কারণে ছেলেটির প্রতি অভিমান করে সে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। চিরকুটের লেখা মৃত হাসি মণির কি না, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।