স্থাপনা নির্মাণে খাল ভরাট

বরিশালে গৌরনদী উপজেলার ভূরঘাটা-তাঁরাকুপি ভায়া ইল্লা সরকারি খাল বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ভূরঘাটা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ভূরঘাটা-তাঁরাকুপি ভায়া ইল্লা সরকারি খাল অবৈধভাবে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। স্থানীয় এক ধনী ব্যক্তি স্থাপনা নির্মাণের জন্য খালের মধ্যে বাঁধ দিয়ে এটি ভরাট করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খালটি পুরোপুরি ভরাট হয়ে গেলে সেচের অভাবে ওই এলাকার ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই বিষয়ে স্থানীয় কৃষকেরা ২২ নভেম্বরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পেয়ে ওই দিনই উপজেলা প্রশাসন খাল ভরাটের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু ওই ব্যক্তি প্রশাসনের লোক চলে যাওয়ার পর আবার ভরাটের কাজ শুরু করেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র ও স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশে জনগুরুত্বপূর্ণ ভূরঘাটা-তাঁরাকুপি ভায়া ইল্লা সরকারি খাল। এই খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৪০-৫০ ফুট। এই খাল থেকে পানি নিয়ে খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক শত বছরের বেশি সময় ধরে বোরা ধানের খেতে সেচ দিচ্ছেন। কিন্তু খালটি বালু দিয়ে ভরাট করে আল-মদিনা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও বহুতল বিপণিবিতান নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন ভূরঘাটা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মুন্সী। গিয়াস উদ্দিন ১০ নভেম্বর থেকে খালটি ভরাট শুরু করেছেন। এই পর্যন্ত তিনি খালে দুটি বাঁধ দিয়ে খালের ১১ শতাংশ জমি ভরাট করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, খালের ভূরঘাটা সংযোগমুখ থেকে একটি সড়ক তাঁরাকুপি পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। ১৯৯৭ সালে সড়কের ভূরঘাটা মুন্সীবাড়ি এলাকায় খালের ওপর বরিশাল এলজিইডি একটি পাকা সেতু নির্মাণ করে। গিয়াস উদ্দিন বালু দিয়ে খাল ভরাট করতে ওই সেতুর প্রায় ১০ ফুট উত্তরে ও ১৫০ ফুট দক্ষিণে ২টি বাঁধ দিয়েছে। সেতুর নিচ দিয়ে সামান্য পানিনিষ্কাশনের জন্য আরসিসি পাইপ বসানো হয়েছে। খালে দুই পাশে দুটি বাঁধ দেওয়ার ফলে খালটি শুকিয়ে গেছে।

এই সময় ওই এলাকার ভূরঘাটার সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক, খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আরজ আলী সরদার, গাইনের পাড় গাইনের পাড় বোরো প্রকল্পের ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা, ইল্লা গ্রামের বোরো প্রকল্পের ব্যবস্থাপক জালাল ঘরামী বলেন, মহাসড়কঘেঁষা ভূরঘাটা-তাঁরাকুপি ভায়া ইল্লা খালের আওতায় ইল্লা, বার্থী, তাঁরাকুপি, গাইনের পাড় ও ভূরঘাটা এলাকায় ছোট-বড় ৩০টি সেচ প্রকল্প রয়েছে। খালটির পানি দিয়ে ওই সব বোরো প্রকল্পের অধীন কয়েক হাজার কৃষক তাঁদের জমিতে সেচ দেন। খালটি ভরাট করায় এ বছর বোরা চাষ একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। খালটি ভরাট করায় চলতি বছর ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করতে পারবেন না সাধারণ কৃষক।

এই বিষয়ে খাঞ্জাপুর ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মৃধা অভিযোগ করেন, ‘সরকারি খাল ভরাট করা শুরু করলে আমি বাধা দিই। কিন্তু আমার বাধা উপেক্ষা করে গিয়াস উদ্দিন ভরাটকাজ অব্যাহত রাখে। পরে আমি ও স্থানীয় কৃষকেরা লিখিতভাবে খাল ভরাটের বিষয়টি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও ইউএনওকে জানাই। প্রশাসন কাজ বন্ধ করার জন্য নোটিশ দিলেও তা উপেক্ষা করে ভরাটের কাজ অব্যাহত রাখেন গিয়াস উদ্দিন মুন্সী।’

সরকারি খাল ভরাট করার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গিয়াস উদ্দিন মুন্সী বলেন, ‘খালের মধ্যে অনেকেই বাঁধ দিয়েছেন। আমি বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে ১১ শতাংশ জমি ১০ বছরের ইজারা নিয়ে বৈধভাবে খালে বাঁধ দিয়ে ভরাটের কাজ করছি। সড়ক ও জনপথ ইজারা মাশুল প্রস্তুত করেছে। আমি ইজারার টাকা পরিশোধ করব।’

গৌরনদী উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দীপংকর বাড়ৈ জানান, ‘ভূরঘাটা-তাঁরাকুপি ভায়া ইল্লা খালের আওতায় থাকা ইল্লা, বার্থী, তাঁরাকুপি, গাইনের পাড় ও ভূরঘাটা এলাকায় ছোট-বড় ৩০টি প্রকল্পের চলতি বছর বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খালে বাঁধ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কৃষকেরা আমার কাছে অভিযোগ করলে আমি সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাই। পরে বিষয়টি ইউএনও এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’

গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার শেখ বলেন, খাল ভরাটের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর বিষয়টি ইউএনওকে জানানোসহ গিয়াস উদ্দিন মুন্সীকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে গৌরনদীর ইউএনও মো. আবু আবদুল্লাহ্ খান বলেন, ২২ নভেম্বর খাল ভরাটের খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলামকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে খাল ভরাটের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ অমান্য করে খাল ভরাটের কাজ চালালে তাঁর (গিয়াস উদ্দিনের) বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সওজের বরিশাল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহামুদ বলেন, ‘কাউকে সওজের জমি ইজারা দেওয়া হয়নি। প্রবহমান খাল ইজারা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই এলাকায় প্রবেশপথ করার জন্য একজন তাঁদের কার্যালয়ে আবেদন করেছেন। ওই আবেদন যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।