কংক্রিটের সেতু অর্ধেক, বাকিটা বাঁশের সাঁকো 

প্রায় পাঁচ বছর আগে অতিবৃষ্টির কারণে সেতুটির উত্তর পাশের মাটি সরে গিয়ে সেতুটির প্রায় অর্ধেক অংশ হঠাৎ ধসে পড়ে।

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার কারপাশা ইউনিয়নের অলি মিয়ার খালের ওপর জরাজীর্ণ কংক্রিটের সেতু। গত রোববার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

খালের ওপর ভেঙে পড়ে আছে কংক্রিটের সেতুর অর্ধেকটা। জরাজীর্ণ সেতুটির বাকি অর্ধেক অংশের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বাঁশের সাঁকো। এর ওপর দিয়ে চলাচল করছেন লোকজন। প্রায় পাঁচ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছেন দুই গ্রামের প্রায় তিন হাজার মানুষ। কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার কারপাশা ইউনিয়নের অলি মিয়ার খালে এ সেতুর অবস্থান।

গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির ধসে পড়া অংশ এখনো পড়ে আছে নিচে। যেটুকু অংশ কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে, সে অংশের রেলিং ভাঙা। বাঁশের খুঁটি দিয়ে তৈরি করা আছে সেতুর অর্ধেকটা। সেতুটির উত্তর পাশে (যেদিকে বাঁশের সাঁকো) রয়েছে সহরমূল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। উত্তর পাশে খালের পাড়ের রাস্তা এবড়োখেবড়ো। সংযোগ সড়কও নেই।

কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। কয়েক দিন পরপর এসে শুধু মাপজোখ করে নিয়ে যায়। সাঁকো প্রতিবছর মেরামত করা লাগছে।
আবদুল জাব্বার, সহরমূল গ্রামের বাসিন্দা

সহরমূল গ্রামের আবদুল জাব্বার বলেন, একদিন ঘুম থেকে উঠে এসে দেখেন সেতুটির প্রায় অর্ধেক অংশ ধসে খালে পড়ে আছে। ওই সময় অনেক বৃষ্টি হয়েছিল। এরপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। প্রতিবছর আবার বাঁশের সাঁকোও মেরামত করা লাগছে। অথচ কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। কয়েক দিন পরপর এসে শুধু মাপজোখ করে নিয়ে যায় তারা। দিন দিন যেভাবে মাটি সরে যাচ্ছে, তাতে খালসংলগ্ন বিদ্যালয় ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় পড়েছে।

সহরমূল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুখ হোসাইন বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে প্রায় ২৫০ শিক্ষার্থী রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ বাঁশের সাঁকো দিয়েই শিক্ষার্থীদের পারাপার করতে হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে পারাপার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এতে প্রায়ই সাঁকো থেকে পা পিছলে পড়ে গিয়ে ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। যত দ্রুত সম্ভব এখানে যেন নতুন সেতু নির্মাণ করে তাঁদের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, সেতুটির দক্ষিণ পাশে নিকলীর কারপাশা আর উত্তর পাশে সহরমূল গ্রাম। দুই গ্রামকে যুক্ত করেছে অলি মিয়ার খালের ওপর নির্মিত এ সেতু। সহরমূল গ্রামের লোকজন কারপাশা গ্রাম হয়ে নিকলী সদরে যাতায়াত করেন। না হলে তাঁদের দেড়-দুই কিলোমিটার পথ ঘুরে যাওয়া লাগে। প্রায় পাঁচ বছর আগে অতিবৃষ্টির কারণে সেতুটির উত্তর পাশের মাটি সরে গিয়ে সেতুটির অর্ধেক অংশ হঠাৎ ধসে পড়ে। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসীর উদ্যোগে কংক্রিটের সেতুর বাকি অংশের সঙ্গে বাঁশের সাঁকো জুড়ে দেওয়া হয়। এলাকাবাসী প্রতিবছর চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো মেরামত করেন। সেতুটির ওপর দিয়ে রিকশা–ভ্যানও চলাচল করতে পারছে না।

কারপাশা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাকি আমান খান বলেন, সেতুটি নির্মাণের জন্য তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে অনুরোধ করেছেন। সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মো. শামছুল হক জানান, প্রায় ২০ বছর আগে এলজিইডির অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ করা হয়। এখানে ২৩ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি গার্ডারের একটি সেতু নির্মাণ করা লাগবে। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ লাগতে পারে।

এলজিইডির কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, এ সেতু নির্মাণে স্থানীয় সংসদ সদস্য গত বছরের জুলাই মাসে ডিও লেটার দিয়েছেন। ইতিমধ্যে এর নকশার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নকশা চলে এলে দরপত্র আহ্বান করা হবে।