নিরাপত্তা ছাড়াই যাত্রী পারাপার স্পিডবোটে

ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা নদীতে যাত্রী পারাপার করছে স্পিডবোটগুলো। যাত্রীদের গায়ে নেই লাইফ জ্যাকেট। গতকাল দৌলতদিয়া ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও পাবনার কাজীরহাট নৌপথের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। পদ্মা ও যমুনা নদীর এই নৌপথে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার হয়ে থাকে। এতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। শুষ্ক মৌসুমে এই দূরত্ব কমে ৩০ কিলোমিটার হলে সময় লাগে প্রায় ২৫ মিনিট। দৌলতদিয়া থেকে পাবনা ও সিরাজগঞ্জে যাতায়াতে স্বল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে স্পিডবোটে যাত্রীদের আগ্রহও তাই বেশি। এতে জনপ্রতি ৩০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। তবে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপারে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না।

অভিযোগ রয়েছে, অদক্ষ চালক দিয়ে স্পিডবোট চালানো হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় বাধ্যতামূলক লাইফ জ্যাকেট পরার বিধান থাকলেও সবাইকে লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হচ্ছে না, বা দিলেও যাত্রীরা তা পরছেন না। প্রতিটি বোটে ১২ জন যাত্রী বহনের কথা থাকলেও ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ১৮ থেকে ২০-২২ জন যাত্রী বহন করা হচ্ছে হরদম। এতে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। আর তাতে প্রাণহানির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

দৌলতদিয়া ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়ার মালিকানাধীন ছয়টি ও কাজীরহাটের মালিকানাধীন আরও ছয়টি স্পিডবোট দৌলতদিয়া-কাজীরহাট নৌপথে চলাচল করে। এক দিন পর এক দিন হিসাবে তাদের স্পিডবোটগুলো চলাচল করে। প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত যেকোনো একপক্ষের ছয়টি স্পিডবোট যাত্রী পারাপার করে।

গতকাল বুধবার দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপারে অনিয়মের চিত্র দেখা গেছে। সকাল ১০টার দিকে পাবনার কাজীরহাট থেকে ‘এসপিবি রোমান’ নামের একটি স্পিডবোট ১৬ জন যাত্রী নিয়ে ঘাটে ভেড়ে। এর মধ্যে ১৪ জন পুরুষ, ১ জন নারী ও ১ শিশু ছিল। অথচ স্পিডবোটটির ধারণক্ষমতা ১২ জনের।

এই বোটে আমরা ১৬ জন এসেছি। আমাদের লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হয়নি। তবে নদীর এক পাশ দিয়ে এসেছে বলে তেমন ঝুঁকি মনে হয়নি। তা ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তো আমাদের আসা-যাওয়া করতেই হবে।
নূরন্নবী, সিরাজগঞ্জ থেকে দৌলতদিয়া আসা যাত্রী

ঘাটে ভেড়ার পর সিরাজগঞ্জ থেকে আসা নূরন্নবী নামের একজন যাত্রী বলেন, ‘এই বোটে আমরা ১৬ জন এসেছি। আমাদের লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হয়নি।’ এতে ঝুঁকি মনে হয়েছে কি না, জানতে চাইলে বলেন, ‘নদীর এক পাশ দিয়ে এসেছে বলে তেমন ঝুঁকি মনে হয়নি। তা ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তো আমাদের আসা-যাওয়া করতেই হবে।’

রোকেয়া বেগম নামের একজন নারী যাত্রী বলেন, ‘নতুন নতুন যখন আসতাম, তখন মনে কিছুটা ভয় কাজ করত। এখন মাঝেমধ্যেই আসা-যাওয়া করায় ভয় অনেকটা কেটে গেছে।’ লাইফ জ্যাকেট পরেছিলেন কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘জ্যাকেট পরার কথা বলেছিল, কিন্তু পরিনি।’

দৌলতদিয়া ঘাটের দায়িত্বরত স্পিডবোট পরিচালনা কমিটির ব্যবস্থাপক তোতা খান বলেন, সকালে হঠাৎ করে যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ১৮ জন করে পার হয়েছে। যাত্রীদের মধ্যে লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করা প্রসঙ্গে বলেন, লাইফ জ্যাকেট দিলেও অনেকে নিচে রেখে বসে থাকেন। এ ছাড়া বর্তমানে তেমন কোনো সমস্যা নেই।

নিয়ম মেনে স্পিডবোট চালানো হচ্ছে কি না প্রশ্নে কাজীরহাট থেকে দৌলতদিয়ায় আসা স্পিডবোটচালক মো. বকুল বলেন, ‘নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষক এসে আরিচা ঘাটে আমাদের পরীক্ষা নিলে প্রায় ১১০ জন পাস করি। আমাদের প্রশিক্ষণসহ সার্টিফিকেট রয়েছে। যে কারণে আমাদের বোট চালাতে কোনো সমস্যা নাই। এ ছাড়া যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হলেও গরম লাগায় কেউ ব্যবহার করতে চান না।’

জানতে চাইলে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে দায়িত্বরত বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের ট্রাফিক পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন ও আফতাব হোসেন বলেন, স্পিডবোটচালক ও ঘাট ব্যবস্থাপককে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করাসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি নিয়ে যাত্রী বহন করতে বলা হয়েছে। এরপরও আদেশ অমান্য করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।