সৌদি আরবে প্রবাসীর মৃত্যু, লাশ ফিরে পাওয়ার আকুতি স্বজনদের
সৌদি আরবের আবহা শহরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, দালালের মাধ্যমে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ওই যুবক। শিকার হন প্রতারণা ও নির্যাতনের। দ্রুত তাঁর লাশ ফিরিয়ে আনার আকুতি জানিয়েছেন ওই পরিবারের লোক।
ওই প্রবাসীর নাম মো. হানিফ (৩৪)। তিনি ১৬ জুন সৌদি আরবের রিয়াদের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর পর সৌদি আরবে বসবাসকারী তাঁর নিকট আত্মীয়ও (দালাল) এ বিষয়ে কোনো দায়দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। ফলে নিহত হানিফের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গ্রামের বাড়িতে নিহত হানিফের বৃদ্ধ মা–বাবা ও স্ত্রী–সন্তানেরা শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন।
হানিফের গ্রামের বাড়ি বেগমগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের মৌজা আবদুল্যাহপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুল মোতালেব। হানিফের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বড় ভাই (হানিফ) গ্রামের বাড়িতে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন। প্রায় তিন মাস আগে সৌদি আরবে বসবাসকারী তাঁর বড় বোনের শ্বশুর সহিদ উল্যাহ তাঁকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে সৌদি আরব নিয়ে যান। তাঁকে রাজমিস্ত্রির কাজ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী ধারদেনা করে তাঁর ভাই সহিদ উল্যাহকে চার লাখ টাকা দেন।
জাহাঙ্গীর আলম জানান, সৌদি আরব যাওয়ার পর তাঁর ভাই হানিফকে রাজমিস্ত্রির কাজ না দিয়ে আবহা এলাকায় ভেড়া চড়ানোর চাকরি দেওয়া হয়। সেখানে যে মালিকের অধীন তাঁকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল, ওই ব্যক্তি তাঁর ভাইকে নানা ধরনের নির্যাতন করতেন। বিষয়টি সহিদ উল্যাহকে জানানোর পর তিনি হানিফের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৬ জুন রিয়াদের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হানিফকে। ওই হাসপাতালে ওই দিনই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
পারিবারিক সূত্র জানায়, মারা যাওয়ার আগে মো. হানিফ প্রতারণার শিকার হওয়া ও নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ভয়েস মেসেজ তাঁর স্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁকে যে ভিসায় সৌদি আরব নেওয়া হয়েছে, সেটির ছবি তুলে পাঠিয়েছেন। হানিফের পাঠানো ভিসার ছবি থেকে বোঝা যায়, তাঁকে গৃহকর্মীর কাজ করানোর উদ্দেশ্যে ৯০ দিনের ভিসায় সৌদি আরব নেওয়া হয়েছে। ভিসার মেয়াদ ছিল গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মে পর্যন্ত।
হানিফের লাশ শেষবারের মতো দেখার জন্য তাঁর বৃদ্ধ মা–বাবা, তাঁর স্ত্রী ও তিন সন্তান অপেক্ষায় আছেন। তাঁরা শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, ভাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁরা তাঁদের আত্মীয় সহিদ উল্যাহর সঙ্গে যোগাযোগ করে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে বলেন। এতে তিনি উল্টো ক্ষেপে দিয়ে নানা হুমকি দিচ্ছেন।
হানিফের আত্মীয় শরীফা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, হানিফ দেশে রাজমিস্ত্রির কাজ করে পরিবার চালাতেন। বৃদ্ধ মা–বাবা ছাড়াও ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ, স্ত্রী আফিয়া খাতুন ও তিন সন্তানের খরচ জোগাতেন। তাঁর বড় ছেলে মেহেদী হাসান পঞ্চম শ্রেণিতে, ছোট ছেলে নুরানি মাদ্রাসায় প্রথম জমায়েতে পড়ে। একমাত্র মেয়ে উম্মে জয়নবের বয়স আড়াই বছর। হানিফের মৃত্যুতে পুরো পরিবারে এখন অন্ধকার নেমে এসেছে।
এ বিষয়ে সহিদ উল্যাহর বক্তব্য জানার জন্য সৌদি আরবে ব্যবহৃত তাঁর মুঠোফোন নম্বরে একাধিবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। তবে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা সহিদ উল্যাহ প্রায় ১৫ বছর ধরে সৌদি আরব বসবাস করছেন। দীর্ঘ এই সময় ধরে তিনি একবারের জন্যও দেশে আসেননি।
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবু ছালেক প্রথম আলোকে বলেন, নিহত মো. হানিফ যদি বৈধ পথে সৌদি আরব গিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে বিনা খরচে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনাসহ নিয়ম অনুযায়ী সরকারিভাবে দেওয়া ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।