লবণসহিষ্ণু সয়াবিনের দুটি নতুন জাত উদ্ভাবন
লবণসহিষ্ণু সয়াবিনের নতুন দুটি জাত উদ্ভাবন করেছেন বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে জাত দুটির অনুমোদনও পাওয়া গেছে।
গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের গবেষকেরা লবণসহিষ্ণু উচ্চফলনশীল সয়াবিনের দুটি জাত উদ্ভাবন করেছেন। জাত দুটি হচ্ছে ‘বিইউ সয়াবিন-৩’ ও ‘বিইউ সয়াবিন-৪’। জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে জাত দুটির অনুমোদনও পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও জাতীয় বীজ বোর্ডের সচিব মো. আবু জুবাইর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সয়াবিনের নতুন জাত দুটি মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দুটি জাতই রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন ও প্রচুর ভিটামিনসমৃদ্ধ। জাত দুটি চাষাবাদ করলে কৃষকেরাও লাভবান হবেন।
২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগ থেকে বিইউ সয়াবিন-১ নামে খর্বাকৃতি ও অপেক্ষাকৃত কম সময়ে পরিপক্ব উচ্চফলনশীল এবং বিইউ সয়াবিন-২ নামে উচ্চফলনশীল, খরা ও জলাবদ্ধতাসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করা হয়। জাত দুটি কৃষক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়।
উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় সয়াবিনের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নতুন জাত দুটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। জাত দুটির উদ্ভাবন গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক আবদুল করিম বলেন, নতুন উদ্ভাবিত দুটি জাত নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ভোলার কয়েকটি উপজেলায় বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ত জমিতে মাঠপর্যায়ের কৃষকদের সম্পৃক্ত করে রবি ও খরিফ—উভয় মৌসুমেই চাষ করা হয়। বিভিন্ন উপজেলায় জাত দুটির গড় ফলন পাওয়া গেছে ৩ দশমিক ২ মেট্রিক টন।
আবদুল করিম জানান, বড় দানাবিশিষ্ট সয়াবিনের জাত দুটির উপযোগিতা যাচাইয়ের সময় দেশের অন্যান্য জাত প্রতি হেক্টরে ২০০-৪০০ কেজি ফলন দিয়েছে। সেখানে নতুন দুটি জাতের সমপরিমাণ লবণাক্ততায় ফলন ছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার ১০০ কেজি। বিইউ সয়াবিন-৩ ও বিইউ সয়াবিন-৪ জাত দুটির যথাক্রমে এক হাজার বীজের ওজন ২২০ ও ২২৫ গ্রাম, যা বাংলাদেশের বিদ্যমান যেকোনো জাতের চেয়ে বেশি। দুটি সয়াবিনের জাতে প্রোটিনের পরিমাণ ৪২ ও ৩৯ ভাগ, তেল ১৯ ও ১৭ ভাগ, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ১২ দশমিক ৬ ও ১১ দশমিক ৫ এবং ট্রিপসিন ইনহিবিটর ৩০ দশমিক ৩ ও ৪৩ দশমিক ৩৮ মিলিগ্রাম।
বিশ্ববিদ্যালয় কৃষিতত্ত্ব বিভাগের গবেষকেরা জানান, এখনো বাংলাদেশে সয়াবিন মূলত পশু ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে ইদানীং বিভিন্ন স্ন্যাকস, সয়ামিট বল ও সয়ামিল্ক হিসেবে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সয়াবিনে প্রোটিন বা আমিষের পরিমাণ (৩০-৫৫ শতাংশ), যা অন্য যেকোনো ফসল, যেমন ডাল, তেল কিংবা দানাদার শস্যের তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক পুষ্টি সমস্যা সমাধানের জন্য সয়াবিনের ব্যবহার বৃদ্ধি একান্ত অবশ্যক।
বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গিয়াসউদ্দীন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করছি, নতুন জাত দুটি চাষাবাদ করে কৃষকেরা লাভবান হবেন। সংশ্লিষ্ট কৃষক ও গবেষকদের মতামতের ভিত্তিতে বিইউ সয়াবিন-৩ ও বিইউ সয়াবিন-৪ নামে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগে নিবন্ধন করা হয়েছে।’
উপাচার্য জানান, দীর্ঘমেয়াদি এ গবেষণায় আর্থিক সহযোগিতা করেছে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) ও বশেমুরকৃবি। এ ছাড়া কৃষকের মাঠপর্যায়ে গবেষণায় বিভিন্ন আঙ্গিকে সহযোগিতা করেছে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া নামে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তারা।