শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচির মধ্যে প্রশাসনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচি ও প্রশাসনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ দুপুরে প্রশাসনিক ভবেনর সামনেছবি: প্রথম আলো।

উপাচার্য শিরীণ আখতার ও সহ-উপাচার্য বেনু কুমার দের পদত্যাগের দাবিতে দ্বিতীয় দফা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। আজ দুপুর ১২টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ অবস্থান শুরু হয়। একই জায়গায় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রযাত্রায় গণতন্ত্রের বিজয়’ শিরোনামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অনুষ্ঠানে অংশ নেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, উপাচার্য অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে শিক্ষক সমিতির আন্দোলন বানচাল করার চেষ্টা করছেন। তবে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এক দফা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তাঁরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান করার নজির নেই। শিক্ষক সমিতির নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন বানচাল করতে প্রশাসন এ ধরনের কাজ করেছে। যেখানে বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা, প্রশাসনিক কাজকর্ম চলছে; সেখানে উচ্চ শব্দে গানবাজনা করা কাম্য নয়।

আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছে শিক্ষক সমিতি। এর পশ্চিম পাশেই কয়েক মিটার দূরে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রযাত্রায় গণতন্ত্রের বিজয়’ শিরোনামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছে প্রশাসন। এ সময় উচ্চ শব্দে গানবাজনা করতে দেখা গেছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসির পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মামুন, প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ সজীব কুমার ঘোষ, আলাওল হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফরিদুল আলম প্রমুখ।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক বলেন, প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতির প্যান্ডেল ছিল। তবে প্যান্ডেল সরিয়ে একই জায়গায় প্রশাসন অন্য কর্মসূচি করে শিক্ষক সমিতির সদস্যদের বিব্রত করেছে। প্রশাসনের প্যান্ডেল না সরানো হলে আগামীকাল থেকে সমিতির সদস্যরা উপাচার্যের কার্যালয়ে অবস্থান করবেন।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর  নূরুল আজিম সিকদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের উল্লাসে অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন তা পরিবেশন করছেন। সমিতি নিজেই তাদের প্যান্ডেল সরিয়েছে। প্রশাসনের এখানে হাত নেই।

এদিকে বেলা দেড়টার দিকে প্রশাসনের এ অনুষ্ঠান শেষ হলে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বক্তব্য দেন সমিতির সদস্যরা। এ সময় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হকের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন সিরাজ উদ দৌল্লাহ, আইন অনুষদের সাবেক ডিন এ বি এম আবু নোমান, বাংলা বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ শফিউল আযম, লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসী প্রমুখ।

গত ১৭ ডিসেম্বর অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে নিয়োগের চেষ্টার অভিযোগ এনে বাংলা ও আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সমিতির এ অবস্থানের মধ্যেই ওই দিন আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয় কর্তৃপক্ষ। এর পর থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ এনে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষক সমিতি। সমিতির আন্দোলনের মুখে ১৮ ডিসেম্বর বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। এরপর ৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলা ও আইন বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার অনুরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য শিরীণ আখতার ২১ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, সিন্ডিকেট প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করেই তিনি এ নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। আইনের কোনো লঙ্ঘন করেননি।