৫১ বছর ধরে নৌকাই ভরসা

সেতু না থাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নদ পারাপার হচ্ছেন নৌকা দিয়ে। এতে মানুষের ভোগান্তির সীমা নেই। 

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বড়ইকান্দি ও হালুয়াঘাট উপজেলার শাকুয়াই বাজারে সংযোগ এলাকায় কংস নদে সেতু না থাকায় মানুষের দুর্ভোগ। সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের দুই উপজেলার সীমানাকে ভাগ করেছে কংস নদ। এক পারে ফুলপুর উপজেলার বড়ইকান্দি বাজার ও অপর পারে হালুয়াঘাট উপজেলার শাকুয়াই বাজার। দুই পারেই আছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) পাকা সড়ক। কিন্তু কংস নদে নেই সেতু। 

সেতু না থাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নদ পারাপার হচ্ছেন নৌকা দিয়ে। এতে মানুষের ভোগান্তির সীমা নেই। 

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এ দুর্ভোগ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। দীর্ঘ ৫১ বছরেও ওই এলাকার কংস নদে সেতু নির্মাণ না হওয়ায় মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ এলাকার মানুষের নদ পারাপারে নৌকাই একমাত্র ভরসা।

সম্প্রতি সরেজমিনে জানা যায়, তারাকান্দা উপজেলার তালদিঘী থেকে হালুয়াঘাট উপজেলার মুন্সীরহাট পর্যন্ত এলজিইডির পাকা সড়কটি বেশ মসৃণ। এ সড়ক দিয়ে ফুলপুর, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। তবে ফুলপুরের বড়ইকান্দি আর হালুয়াঘাট উপজেলার শাকুয়াই বাজারের মাঝখানে কংস নদে সেতু না থাকায় মানুষ নৌকায় পারাপার হচ্ছেন। খেয়া পারাপারের জন্য একজনমাত্র মাঝি। নদের দুই পাশে বাঁশের খুঁটিতে বাঁধা দড়ি টেনে টেনে চালাতে হয় নৌকা। অনেক সময় মাঝি ক্লান্ত থাকলে যাত্রীরাই দড়ি টেনে টেনে নৌকা পার করেন। খেয়াঘাটে ১ ঘণ্টা সময় অবস্থান করে দেখা যায়, বয়স্ক নারী, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ চলাচল করছে। কিছুক্ষণ পরপর আসছে মোটরসাইকেল। নৌকায় করে নদ পার হতে গিয়ে মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

ফুলপুরের পাগলা গ্রামের মফিদুল ইসলাম বলেন, সারা দিনে অন্তত ৩০০ মোটরসাইকেল চলাচল করে। সেতু না থাকায় মানুষ নৌকায় করে মোটরসাইকেল নিয়ে নদ পার হন। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। 

খেয়াঘাটের মাঝি শ্যাম দেওয়া বলেন, সপ্তাহে দুদিন শাকুয়াই হাট। এ দুদিন অন্তত ১০ হাজার মানুষ পারাপার করেন। এ ছাড়া প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার হাজার মানুষ এ ঘাট দিয়ে খেয়া পারাপার হন। অন্তত ৩০ বছর ধরে এ খেয়াঘাটে মাঝি হিসেবে নিয়োজিত আছেন তিনি। শ্যাম আরও জানান, বর্ষাকালে কংস নদে দুকূল ছাপিয়ে যায় স্রোত। খরস্রোতা নদে বর্ষাকালে খেয়া পারাপার খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। 

শ্যাম দেওয়া বলেন, প্রতি বছর ১৬ লাখ টাকায় ইজারা হয় এ ঘাট। প্রতিদিন নৌকা চালানোর পারিশ্রমিক হিসাবে তিনি পান ৫৫০ টাকা। 

খেয়াঘাট দিয়ে পারাপার করার সময় জহিরুল ইসলাম নামের এক তরুণ বলেন, স্থানীয় মানুষদের দাবি, এ ঘাটে দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন প্রশাসনের আন্তরিক ইচ্ছার অভাবে এখানে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। 

ফুলপুরের বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান দেলোয়ার মুজাহিদ সরকারকে ফোন করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ কেটে দেন। 

এলজিইডির ফুলপুর উপজেলা প্রকৌশলী রাকিব উল হাফিজ বলেন, বড়ইকান্দি ঘাট এলাকাটি তিনি চিনতে পারেননি। পরে খোঁজ নিয়ে জানবেন বলেও জানান তিনি। তবে এলজিইডির ময়মনসিংহ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, ময়মনসিংহের অনেকগুলো সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দেওয়া আছে। এরমধ্যে এ সেতুটির কথা আছে কি না, মনে পড়ছে না। তবে প্রস্তাবে থাকলে সেতু নির্মাণ হবে।