কুষ্টিয়ায় অ্যাপে বিনিয়োগ করে দিশাহারা ৫ হাজার মানুষ, মূল হোতারা সৌদি আরবে

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এমটিএফই-এর বিনিয়োগকারীদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক ছবি
সংগৃহীত

কুষ্টিয়ায় একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের পরিচালক ও এক সাবেক পুলিশ সদস্য মিলে চালাতেন অর্থ বিনিয়োগের অ্যাপ এমটিএফই-এর কার্যক্রম। তাঁরা ভালো লাভ দেওয়ার কথা বলে লোকজনকে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতেন। তাঁদের কথার ফাঁদে পড়ে জেলার অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ এমটিএফই অ্যাপে শতকোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। হঠাৎ অ্যাপ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা দিশাহারা। মূল দুই হোতা বর্তমানে সৌদি আরব আছেন।

জেলার এমটিএফই অ্যাপে অর্থ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতারাতি লাভবান হওয়ার আশায় কুমারখালীসহ কুষ্টিয়া জেলার অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ এ অ্যাপে বিনিয়োগ করেন। এর মধ্যে কুমারখালী উপজেলাতেই আছেন দুই হাজার বিনিয়োগকারী। তাঁরা ৮ হাজার থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছিলেন এ অ্যাপে। গত শুক্রবার থেকে অ্যাপের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

তাঁরা আরও বলেন, তাঁদের অনেকেই জানতেন মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতিতে এ অ্যাপের কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো, যা দেশের আইনে অবৈধ। তারপরও তাঁরা লাভের আশায় বিনিয়োগ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমারখালীতে এমটিএফই অ্যাপের কার্যক্রম পরিচালনা করেন পৌরসভার বাটিকামারা মধ্যপাড়ার মো. মিজানুর রহমান। তিনি স্থানীয় ফেমাস ফুলকুঁড়ি বিদ্যালয়ের পরিচালক। আর তাঁর প্রধান সহকারী ছিলেন পৌরসভার ঝাউতলা এলাকার মো. মাসুম আলী। তিনি পুলিশের কনস্টেবল ছিলেন। চাকরি করতেন ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরের আইটি বিভাগে। সম্প্রতি তিনি পুলিশের চাকরি ছেড়ে এমটিএফইসহ বেশ কিছু অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন।

কুমারখালী বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন সিঙ্গার প্লাজার দোতলায় কার্যালয় করে প্রায় দেড় বছর ধরে তাঁরা ব্যবসা পরিচালনা করেন। মাসুম ও মিজানের মাধ্যমে উপজেলায় প্রায় দুই হাজার মানুষ বিনিয়োগ করেন। কারও মাধ্যমে ১০০ জন বা দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে কোম্পানি তাঁকে কান্ট্রি অব অপারেশন সার্ভিস (সিইও) পদমর্যাদা দেয়। মিজানুর কুষ্টিয়ার এমটিএফইর প্রধান সিইও পদে ছিলেন। তাঁর পরের স্থান মাসুম আলীর। মাসুমের মা রেখা খাতুনও আছেন সিইও পদে।

সৌদি আরবে মিজানুর রহমান ও মাসুম আলী
ছবি: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংগৃহীত

বিনিয়োগকারীরা বলেন, ১১ আগস্ট মিজানুর ও মাসুম সৌদি আরবে ওমরা হজ পালন করতে গেন। এরপর থেকেই অ্যাপটিতে নানা সমস্যা হয় ও লাভ (কমিশন) কমে যায়। আর ১৮ আগস্ট থেকে অ্যাপ বন্ধ হয়ে গেছে।

ঝাউতোলার কলেজপড়ুয়া এক তরুণ বলেন, তিনি জানুয়ারি মাসে মাসুমের মাধ্যমে ৯০০ ডলার (প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার টাকা) বিনিয়োগ করেন। প্রথমদিকে ভালোই লাভ হতো। কিছুদিন ধরে অ্যাপে নানা জটিলতা দেখা যায়। লাভও কমে যায়। শুক্রবার অ্যাপ বন্ধ হয়ে গেছে।

হলবাজারের কাপড় ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, মাসখানেক আগে ২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে এ পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার ২০০ টাকা লাভ তুলেছেন। হঠাৎ অ্যাপটি অচল হয়ে গেছে। কুমারখালী থেকেই প্রায় দুই হাজার মানুষের শতকোটি টাকা নিয়ে গেছে কোম্পানিটি।

এলংগীপাড়ার ব্যবসায়ী শিপলু খান বলেন, তিনি মাসুমের মাধ্যমে ৩ মাস আগে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। কোম্পানিতে পদের লোভে তিনি আরও ১০ জনকে বিনিয়োগ করিয়েছেন। কিন্তু এখন তিনি সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।

কুমারখালী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঝাউতলা এলাকায় মাসুম আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, মাসুমের ঘরে এমটিএফইর বিভিন্ন জনের হিসাবের খাতা ও ফাইলপত্র। এ সময় তাঁর মা রেখা খাতুন বলেন, তাঁর ছেলে সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করতে গেছে। মাসুম পুলিশের চাকরি করত। চাকরি ভালো না লাগায় দেড় বছর আগে ছেড়ে দেয় এবং এমটিএফইসহ বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করে। তিনি নিজেও ছাগল বিক্রি করে ছেলের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন। অ্যাপস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁর ছেলের দোষ নেই। মানুষ রাতারাতি লাভবান হওয়ার লোভে বিনিয়োগ করেছে।

প্রধান সিইও মিজানুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তিনিও ওমরা করতে গেছেন। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী সুমি খাতুন এসব নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমটিএফই সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তবে থানায় এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি।