২২ জুলাই সন্তান প্রসবের কথা স্ত্রীর, চার দিন আগে না ফেরার দেশে রাশেদ

গতকাল শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার রঙ্গম কনভেনশন হলের বহুতল ভবনে কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে ফখরুলসহ তিনজন নিহত হন। অপর দুজন হলেন মো. রাশেদ (২৪) ও মো. হাসান (১৮)। তিনজনই নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকার বাসিন্দা।

মো. রাশেদছবি: পরিবারের সৌজন্যে

ছেলের মৃত্যুসংবাদ শুনে হন্তদন্ত হয়ে নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের পথে রওনা হন মো. সেলিম। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরে ছেলে মো. ফখরুলের (২৩) লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, মাত্র তিন মাস আগে ছেলেকে বিয়ে করিয়েছি। বউ চাঁদনিকে ঘরে তুলে এনেছি।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার রঙ্গম কনভেনশন হলের বহুতল ভবনে কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে ফখরুলসহ তিনজন নিহত হন। অপর দুজন হলেন মো. রাশেদ (২৪) ও মো. হাসান (১৮)। তিনজনই নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকার বাসিন্দা। চার মাস ধরে তাঁরা সেখানে কাজ করছিলেন। থাকতেন শ্রমিকদের শেডে।

মো. ফখরুল
ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

ফখরুলেরা দুই ভাই, দুই বোন। ফখরুল বড়। তিন মাস আগে বিয়ে করেছে। এখনো স্ত্রী চাঁদনীর মেহেদির রং শুকায়নি। ফখরুলের বাবা সেলিমও বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করেন। সেলিম বলেন, ‘কাল রাতেও ছেলে আমাকে বলেছে, সামনের সপ্তাহে বাড়ি যাবে। আজ (শুক্রবার) কাজ নেই বলেছিল। তার পরও কেন কাজে গেল জানি না। এখন আমি বাড়িতে কীভাবে যাব।’

দুর্ঘটনার খবর শুনে সন্ধ্যায় নিহত মো. রাশেদের চাচা মো. জামালও হাসপাতালের লাশঘরের সামনে আসেন। রাশেদের স্ত্রী ও এক মেয়ে বাড়িতে থাকে। স্ত্রী পলি অন্তঃসত্ত্বা। জামাল বলেন, ‘রাশেদের সঙ্গে আমার দুই দিন আগে কথা হয়। আজ শুনলাম, সে দুর্ঘটনায় পড়েছে। হাসপাতালে এসে শুনি, সে আর নেই। বাড়িতে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। ২২ জুলাই তাঁর সম্ভাব্য প্রসবের সময়। বাড়ি যাওয়ার কথা তাঁর।’

দুর্ঘটনার খবর শুনে গতকাল সন্ধ্যায় নিহত মো. রাশেদের চাচা মো. জামালও হাসপাতালের লাশঘরের সামনে আসেন। রাশেদের স্ত্রী ও এক মেয়ে বাড়িতে থাকে। স্ত্রী পলি অন্তঃসত্ত্বা। জামাল বলেন, ‘রাশেদের সঙ্গে আমার দুই দিন আগে কথা হয়। আজ শুনলাম সে দুর্ঘটনায় পড়েছে। হাসপাতালে এসে শুনি সে আর নেই। বাড়িতে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। ২২ জুলাই তাঁর সম্ভাব্য প্রসবের সময়। বাড়ি যাওয়ার কথা তাঁর।’

মো. হাসান
ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মো. হাসান (১৮) সবার চেয়ে কম বয়সী। হাসানের বাড়িতে তাঁর মা–বাবা রয়েছেন। কয়েক দিন পর বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে চাচাতো বড় বোন আকলিমার বাসায় মাঝেমধ্যে যাতায়াত করত হাসান। শুক্রবারও যাওয়ার কথা ছিল। না যাওয়ায় হাসানের এক সহকর্মীকে ফোন দিয়ে তাঁর খবর জানতে চান আকলিমা। তবে শুনতে হয় হাসানের মৃত্যুসংবাদ।

হাসপাতালে ভাইয়ের লাশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আকলিমা আকতার। আকলিমা বলেন, ‘সে বলেছে, আপা শুক্রবার কাজ নেই, বাসায় আসব। আসছে না দেখে দুপুরে তাকে ফোন দিই। তাকে ফোনেও পাই না। পরে আরেকজনকে ফোন দিয়ে শুনি হাসান মারা গেছে।’

তিনজনেরই মরদেহ হাসপাতালের লাশঘরে পড়ে রয়েছে। বাড়ি থেকে রাশেদ ও হাসানের বাবা ও ভাইয়েরা শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত পৌঁছাননি। তাঁরা এলে লাশ বাড়িতে নেওয়ার কথা। হাসপাতালের লাশঘরের সামনে তিনজনের অনেক সহকর্মী ভিড় করেন। সবাই শ্রমিক। বেশির ভাগই নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকার বাসিন্দা। সহকর্মীদের মৃত্যুতে তাঁরাও ভেঙে পড়েছেন।

মো. রাসেল ও রুবেল নামে দুই শ্রমিক বলেন, ঠিকাদার যদি নতুন বাঁশের মাচা দিতেন, তাহলে আজ এ দুর্ঘটনা ঘটত না। তাঁরা জানান, শুক্রবার কাজ হওয়ার কথা ছিল না। তার পরও কিছু আস্তরের কাজ করার জন্য তিনজন ৯ তলার ওপরে উঠেছিলেন। যে মাচার ওপর দাঁড়িয়ে তাঁরা কাজ করছিলেন, তা দুর্বল ছিল। ফলে হঠাৎ তা ভেঙে পড়ে যান তিনজনই। শ্রমিকেরা দুই সপ্তাহ ধরে ঠিকাদারকে বলে আসছিলেন নতুন মাচা দেওয়ার জন্য। ঠিকাদার কথা শোনেননি বলে শ্রমিকদের অভিযোগ।