নিজে খবর শোনেন, অন্যদেরও শোনান অটোচালক সালাম

রংপুর নগরের বাসিন্দা আবদুস সালাম
ছবি : প্রথম আলো

রংপুর নগরের বাসিন্দা আবদুস সালাম। বয়স ৬১ বছর। ১০ বছর ধরে তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও দেশ-বিদেশের খবর শুনতে কখনো ভোলেন না। যাত্রীদেরও শোনান। শুধু সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন এই মানুষ এভাবেই প্রতিদিন অটো চালিয়ে আয়রোজগারের পাশাপাশি জ্ঞানের চর্চা করছেন।

সম্প্রতি এক রাতে টাউন হল চত্বরের সামনে অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে স্পিকারে খবর শুনছিলেন সালাম। একজন পথচারী দাঁড়িয়ে কৌতূহল নিয়ে সংবাদ শুনছিলেন। এফএমের খবর শেষে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর আদি নিবাস কুড়িগ্রামে। ৫০ বছর আগে সেখান থেকে চলে আসেন রংপুরে। বর্তমানে থাকেন রংপুর নগরের খটখটিয়া এলাকার সরকারি খাসজমিতে। একসময় প্যাডেল মেরে রিকশা চালিয়েছেন। বয়সের ভারে কষ্ট হওয়ায় প্রায় ১০ বছর ধরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাচ্ছেন। সংসারে তাঁর স্ত্রী ও পাঁচ মেয়ে। স্কুল পর্যন্ত পড়িয়ে চার মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা এখন ভালোই আছেন। আর এক মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

সন্তানদের পড়ালেখা করালেও আবদুস সালাম নিজে পড়াশোনা করেননি। শুধু নাম দস্তখত করতে পারেন বলে জানালেন। সুন্দর পরিপাটি অটোরিকশায় লাগানো আছে একটি রেডিও। সিটের পাশে সাউন্ড বক্স। রংপুরের সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ জি এম নজুকে সেখানে খবর শুনতে দেখা গেল। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সক্রিয় থাকলেও রেডিওর খবর শোনা ভুলেই গেছি। কিন্তু অটোচালক নিয়মিত খবর শুনছেন। সেই সঙ্গে যাত্রীসহ পথচারীদেরও খবর শোনাচ্ছেন। এটি একটি ভালো উদ্যোগ, কেইবা করেন এমন!’

অটোচালক আবদুস সালাম বলেন, ‘দেশের খবর রাখি। কখন কোথায় কী হইতোছে জানবার পারছি। গাড়ি চালাতে গিয়া রেডিও অন করি যাত্রীদের খবর শোনাই। কোনো যাত্রী বিরক্ত হন না। বরং সবাই আমাকে ধন্যবাদ দেন। তখন আমার খুব ভালো লাগে।’

বাজারে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসার কেমন চলছে জানতে চাইলে আবদুস সালাম বলেন, ‘কষ্ট তো হচ্ছে। সবার যেমন করিয়া সংসার চলেছে, হামারো চলেছে। তবে ১৫০ টাকার জিনিস এলা ২২৫ টাকা খরচ লাগে। কিন্তু ১৫০ টাকাতে যতটুকু পণ্য পাওয়া যায়, সেটাই কিনছি। মানে খাওয়া কমি গেইছে। তাতে কোনো অসুবিধা হয় না। এলা খুব হিসাব করি চলতোছি।’