ভালুকায় কেন্দ্রের বাইরে ভিড়, ভেতরে ভোটার কম

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটারদের উপস্থিতি কম। আজ বুধবার দুপুর ১২টা ২৯ মিনিটেছবি: প্রথম আলো

বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিট। ভালুকা পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র। ফটকের বাইরে শ খানেক লোক। ভোটারদের ভোটার নম্বর খুঁজে বের করে দিচ্ছেন প্রার্থীদের লোকজন। কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, পুরুষ বুথে কোনো লাইন নেই। দু-একজন করে ভোটার এসে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন। নারী কেন্দ্রের একটি বুথে অবশ্য তখন জনাদশেকের লাইন।

শুধু ভালুকা পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র নয়, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ছয়টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। প্রতিটি কেন্দ্রের ভেতরে ভোটার উপস্থিতি কম। কিন্তু ভোটকেন্দ্রের সামনে প্রার্থীদের সমর্থকদের ভিড়। ভোট গ্রহণ শেষে আজ বুধবার বিকেল চারটায় নির্বাচন কমিশনে দেওয়া পরিস্থিতি প্রতিবেদনে ৩৫ শতাংশ ভোট পড়ার কথা উল্লেখ করা হয়।

সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ভালুকা সরকারি কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট শুরুর তৎপরতা দেখা যায়। অনেক এজেন্ট তখন আসতে শুরু করেন। ভোটকেন্দ্রে অল্প অল্প ভোটার আসছেন। পুরুষ লাইনে তিনজন পুরুষকে দেখা যায়। নারীদের কোনো লাইন হয়নি তখনো।

এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৪৮ জন। কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. ইসমাঈল হোসেন বলেন, সকাল ৮টা থেকে সুন্দরভাবেই ভোট শুরু হয়। সকাল ১০টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে প্রথম দুই ঘণ্টায় ৭টি বুথে ভোট পড়ে ৩১০টি, যা মোট ভোটের ১০ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৭৭ ও নারী ভোটার ১৩৩ জন।

কেন্দ্রটিতে ভোট দিয়ে বের হয়ে রুকন উজ্জামান নামের এক ভোটার বলেন, ‘টাকার প্রভাবে নয়, যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দিয়েছি। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, মাদক নির্মূল করা এবং শিল্পাঞ্চলে বেকরদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি।’

আরও পড়ুন

ভালুকার ৪৭ নম্বর কাঁঠালী সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১১টা ২০ মিনিটের গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০ জন নারী ও ৫০ জন পুরুষ ভোটারের লাইন। কেন্দ্রটির বাইরেও বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকদের ভিড় লক্ষ করা যায়। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. মাসুম জানান, এ কেন্দ্রে মোট ৪ হাজার ২১০ জন ভোটার। সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪১৯টি ভোট পড়ে।

দুপুর ১২টা ২৯ মিনিটে জামিরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে গিয়ে লোকজনের জটলা দেখা যায়। নারী কেন্দ্রে ১০ জনকে লাইনে দেখা যায়। পুরুষ কেন্দ্রের দুটি বুথে ভোটদানের অপেক্ষায় ছিলেন ৩৩ জন। নারী কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, ৩ হাজার ২১৩ জন ভোটারের মধ্যে সকাল ১০টা পর্যন্ত ১৭০ ভোট ও দুপুরর ১২টা পর্যন্ত ৫১০টি ভোট পড়ে। কেন্দ্রের সামনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী মহিউদ্দিন (মোটরসাইকেল) ও মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের (আনারস) সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়ালে ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। বাইরে গন্ডগোলের প্রভাব ভেতরে পড়েনি।

ভালুকার হবিরবাড়ি সোনার বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি হাতেগোনা। আজ বুধবার বেলা পৌনে চারটার চিত্র
ছবি: প্রথম আলো

বিকেল পৌনে চারটার দিকে হবিরবাড়ি সোনার বাংলা উচ্চবিদ্যালয় ও হবিরবাড়ি কলেজ কেন্দ্রের সামনে গিয়ে দেখা যায়, প্রার্থীদের সমর্থকেরা স্লোগানে মুখর করে তুলেছেন। ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তের ভোট দিয়ে ফিরছেন মানুষ। তবে কেন্দ্রটিতে ভোটার লাইন ছিল না।

আরও পড়ুন

হবিরবাড়ি কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নাইমুর রহমান বলেন, এ কেন্দ্রে ৩ হাজার ৫৭৯ জন ভোটারের মধ্যে বেলা ২টা পর্যন্ত ৭২০টি ভোট কাস্টিং হয়, যা মোট ভোটের ২০ দশমিক ১১ শতাংশ। উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুল হান্নান জানান, কেন্দ্রটিতে ৩ হাজার ৫৯৩ ভোটারের মধ্যে ১ হাজার ১৪টি ভোট পড়ে, যা মোট ভোটের ২৮ দশমিক ২২ শতাংশ। তবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রের ভোট কাস্টিং হয় ১ হাজার ২৭৮টি, যা মোট ভোটের ৩৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

ভালুকা উপজেলায় এবার চেয়ারম্যান পদে সাতজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাতজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

গফরগাঁওয়ে শেষ দুই ঘণ্টায় পড়ল ১৩ শতাংশ ভোট

ভালুকার পাশাপাশি গফরগাঁও ও নান্দাইল উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ বুধবার অনুষ্ঠিত হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া ভোট পড়ার হার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোট ১০টা পর্যন্ত ভালুকা উপজেলায় ৮ শতাংশ, গফরগাঁও উপজেলায় ৪ দশমিক ৩০ ও নান্দাইল উপজেলায় ৫ শতাংশ ভোট পড়ে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টায় ভালুকায় ২১ শতাংশ, নান্দাইলে ১১ ও গফরগাঁও উপজেলায় ১০ শতাংশ ভোট পড়ে। বেলা ২টা পর্যন্ত ভালুকায় ৩৩ শতাংশ, নান্দাইলে ১৭ শতাংশ ও গফরগাঁও উপজেলায় ১৭ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানানো হয়। অবশ্য ভোট শেষে বিকেল চারটার প্রতিবেদনে ভালুকায় ৩৫ শতাংশ, নান্দাইলে ১৯ শতাংশ ও গফরগাঁও উপজেলায় ৩০ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানানো হয়।

শেষ দুই ঘণ্টায় ভালুকা ও নান্দাইলে মাত্র ২ শতাংশ ভোট পড়লেও গফরগাঁও উপজেলায় ১৩ শতাংশ ভোট পড়ে। অথচ গফরগাঁওয়ে প্রথম ২ ঘণ্টায় ভোট পড়েছিল মাত্র ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহফুজুল আলম মাসুম বলেন, গফরগাঁওয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ নির্বাচন হয়নি। একজন প্রার্থী থাকলেও অন্য প্রার্থীদের পোস্টার ও সমর্থক কেউ ছিলেন না। একজন প্রার্থীর লোকজনই মাঠে ছিলেন। শেষ দিকে ভোটার বেশি আসায় কাস্টিং বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, বিকেল চারটায় তাৎক্ষণিক হিসাবে যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে, চূড়ান্ত গণনা শেষে তার পরিমাণ কিছুটা বাড়বে। নান্দাইলে কয়েকটি কেন্দ্রে একটু ঝামেলা হওয়ায় শেষ মুহূর্তে ভোটার যাননি কেন্দ্রে।