রাজশাহীতে সংসদ সদস্যের অনুসারীদের বিরুদ্ধে নৌকার সমর্থককে হাতুড়িপেটার অভিযোগ
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় মাহাবুর রহমান (৪২) নামের নৌকা প্রতীকের একটি ভোটকেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিবকে হাতুড়িপেটা করার ঘটনা ঘটেছে।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের অনুসারী উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে মুখোশধারীরা ওই হামলা করে বলে ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন। তবে আবদুর রাজ্জাক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আজ রোববার দুপুরে উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের গাঙ্গোপাড়া মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার মাহাবুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের অনুসারী এবং যাত্রাগাছি ভোটকেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব। তিনি মাড়িয়া ইউনিয়ন বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি। তাঁর বাড়ি তেলিপুকুর এলাকায়। হামলার পর তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
সংসদ সদস্য এনামুল হক আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর স্থলে এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে তাঁরা দুজন ছাড়াও জাতীয় পার্টির আবু তালেব প্রামাণিক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) সাইফুল ইসলাম ও রাজশাহী জেলা যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক বাবুল হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, দুপুরে গাঙ্গোপাড়া মোড়ে একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন মাহাবুর রহমান। এ সময় উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবুর নেতৃত্বে চার-পাঁচটি মোটরসাইকেলে কয়েকজন মুখোশধারী যুবক সেখানে আসেন। তাঁরা মাহাবুরকে চায়ের দোকান থেকে ধরে সড়কের ওপর নিয়ে যান এবং কেন তিনি নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন কৈফিয়ত চান। একপর্যায়ে তাঁকে সড়কের ওপর ফেলে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে হামলাকারীদের প্রতিরোধ করতে গেলে তাঁরা পালিয়ে যান। পরে আহত মাহাবুরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
আহত মাহাবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের সমর্থক আর্ট বাবুর নেতৃত্বে তাঁকে মেরে ফেলার জন্য হামলা করা হয়েছে। তাঁরা মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ভয় দেখিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তবে হামলায় নিজের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কৃষক লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক। তিনি প্রথম আলোকে, ‘আমি সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে আলোর পথে এসেছি। হামলার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক। এই হামলার মাধ্যমে একটা গেম খেলা হচ্ছে।’
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরবিন্দ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হামলার ঘটনায় কারও নাম উল্লেখ না করে নৌকার প্রার্থী আবুল কামাল আজাদ বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন প্রতিনিয়ত তাঁর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করছেন, হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। একের পর এক হামলা করে তাঁর সমর্থকদের উসকে দেওয়া হচ্ছে। তিনি হামলা ও হুমকি-ধমকি দেওয়া ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁর অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বলেন, তিনি কিংবা সংসদ সদস্য বিষয়টি জানেন না। তিনি ফেসবুকে হামলার ভিডিও দেখে ঘটনাটি জেনেছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় তাঁদের কোনো যোগসূত্র নেই। তাঁরা ভোট চাওয়া নিয়ে ব্যস্ত আছেন।