অন্যায়ভাবে ছাঁটাইয়ের অভিযোগ তুলে সাভারে একটি কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ

ঢাকার সাভারে আনলিমা টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ। মঙ্গলবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার অদূরে সাভারে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের কারখানায় অন্যায়ভাবে ছাঁটাই চলছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সাভারের উলাইল এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক–সংলগ্ন আনলিমা টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রেখে এ বিক্ষোভ করেন।

কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, কারখানার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) গোলাম কিবরিয়া শ্রমিকদের শান্ত করতে গেলে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা তাঁকে মারধর করেছেন। তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে শ্রমিকদের দাবি, উত্তেজিত হয়ে জিএমই শ্রমিকদের মারধর করেছেন।

আরও পড়ুন

কারখানার শ্রমিকেরা জানান, তিন-চার মাস ধরে অন্যায়ভাবে কারখানার শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। চাকরিচ্যুত করা শ্রমিকদের সার্ভিস বেনিফিট, ছুটির টাকাও পরিশোধ করা হচ্ছে না। বিভিন্ন সময়ে এসব বিষয় নিয়ে শ্রমিকেরা কারখানাটির জিএম গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গেলে শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। কিছুদিন আগে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদ জানিয়ে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করলে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে পরে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছিলেন। গতকাল সোমবার কাজ শেষে এক শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। আজ সকালে ওই শ্রমিক কারখানায় ঢুকতে গেলে কারখানার ফটকে তাঁকে আটকে দেওয়া হয়। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন অন্য শ্রমিকেরা। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কারখানার জিএমের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি শ্রমিকদের সঙ্গে আবারও খারাপ ব্যবহার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে কারখানার নিচে নেমে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন।

আরও পড়ুন

খবর পেয়ে শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ ও সাভার মডেল থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। বেলা আড়াইটার দিকে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি পূরণে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা শান্ত হন। আগামীকাল বুধবার এ বিষয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে জানিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ আজকের মতো কারখানা ছুটি ঘোষণা করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফিনিশিং সেকশনের এক শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, তিন মাসে কয়েক শ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। ১৫-২০ দিন আগে শ্রমিকেরা প্রতিবাদ জানালে মালিকপক্ষ আর কোনো শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছিল। সোমবার আবারও একজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এর জেরে আজ শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

আরও পড়ুন

কারখানার অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) মো. কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, অন্যায়ভাবে শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করার অভিযোগটি সঠিক নয়। কারখানায় কাজ কম থাকায় অনেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। নিয়ম অনুসারে প্রত্যেকের পাওনাদি পরিশোধ করা হয়েছে। সোমবার এক শ্রমিক কিছু পোশাক নষ্ট করে ফেলায় তাঁকে নিয়ম অনুসারে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা জিএমকে মারধর করেছেন।

শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর সহকারী পুলিশ সুপার এ বি এম রাশিদুল বারী প্রথম আলোকে বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ বুধবার বিজিএমইএর প্রতিনিধিসহ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রমিকদের আইনসংগত দাবি পূরণে পদক্ষেপ নেবে, এমন আশ্বাসের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। জিএমকে মারধর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, শ্রমিকেরা মারধর করেছেন। অপর দিকে শ্রমিকেরা দাবি করেছেন, জিএম শ্রমিকদের মারধর করেছেন। তবে কারও শরীরেই কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন