কবুতরের হাটে অবাধে বিক্রি হচ্ছে দেশি পাখি

সাপ্তাহিক কবুতরের হাটে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন জাতের দেশীয় পাখি। শুক্রবার দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুরের বেতঝুড়ি পুরানবাজারে
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের শ্রীপুরের বেতঝুড়ি পুরানবাজার সাপ্তাহিক কবুতরের হাটে অবাধে বেচাকেনা হচ্ছে বিক্রি নিষিদ্ধ দেশি পাখি। প্রতি শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ হাট।

আজ বিকেল চারটায় সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক লাগোয়া শ্রীপুর পৌর এলাকার বেতঝুড়ি পুরানবাজার আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশে অন্তত দেড় শ জন কবুতর বিক্রি করছেন। পাশাপাশি দেশি ভাত শালিক, ঝুঁটি শালিক, গোবরে শালিক, কালিম, ডাহুক, ঘুঘু, টিয়াসহ বিভিন্ন জাতের দেশি পাখি বিক্রি হচ্ছে।

হাটে আটটি দেশি শালিক, পাঁচটি ঘুঘু ও ডাহুক, তিনটি কালিম, একটি টিয়া পাখির দোকান দেখা গেছে। একেকটি দোকানে ভাত শালিক প্রতিটি ৮০০, ঝুঁটি শালিক ৯০০ ও গোবরে শালিক ৬০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছিল। বিক্রেতারা কালিম পাখির প্রতি জোড়া দাম চাচ্ছেন ৯ হাজার টাকা। অপর বিক্রেতা ডাহুক জোড়া দাম হাঁকছেন ৭০০ টাকা। এ ছাড়া হাটে দেশি ধূসর ঘুঘু পাখির জোড়া ৩০০, দেশি টিয়া প্রতি জোড়া ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

হাটের শালিক পাখি বিক্রেতা আজাহার ইসলাম বলেন, গ্রামের বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে তিনি পাখি কিনে বাজারে বিক্রি করেন। শালিক পাখিকে কথা বলা শেখানো যায় বলে বাজারে এর চাহিদা বেশি। কালিম পাখি বিক্রেতা আল আমিন বলেন, তিনি ময়মনসিংহ থেকে পাইকারি দামে কালিম পাখি কিনে এনে বিক্রি করছেন।

কবুতরের পাশাপাশি বিক্রি করা হচ্ছে অসংখ্য দেশীয় পাখি। গাজীপুরের শ্রীপুরের বেতঝুড়ি পুরানবাজার সাপ্তাহিক কবুতরের হাটে
ছবি: প্রথম আলো

ডাহুক পাখি বিক্রেতা শফিউল আলম বলেন, কাপাসিয়ার বিভিন্ন এলাকার লোকজনের কাছ থেকে ডাহুক এনে তা বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। ডাহুক পাখি শিকার করা কঠিন। তাই এই পাখির দামও বেশি। দেশি পাখি বিক্রি নিষিদ্ধের বিষয়টি জানা আছে কি না, এমন প্রশ্নে ওই পাখি ব্যবসায়ী বলেন, ‘জানি। তবে সবাই বেচে, আমিও বেচি‌। এটা অত বড় অন্যায় না।’ নজরুল ইসলাম নামের আরেব পাখি বিক্রেতা বলেন, তাঁরা পাখি ধরেন না, কিনে বিক্রি করেন। তাই এ বিষয়ে তাঁদের দায় নেই।

টিয়া পাখির ছবি তুলতে গেলে এক বিক্রেতা কৌশলে পাখি ফেলে চলে যান। তাঁর পাশের কবুতর বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, টিয়া পাখি প্রায় সব হাটেই বিক্রি হয়। এটা এখন সাধারণ কবুতরের মতো বিক্রি করা হচ্ছে। কেউ কোনো বাধা দিচ্ছে না।

বাজারে এত এত দেশি পাখি বিক্রি হলেও বিষয়টি খুব একটা স্বীকার করেননি সাপ্তাহিক কবুতরের হাটের তত্ত্বাবধায়ক মাসুম মিয়া। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘হাটে দেশি পাখি বিক্রি নিষিদ্ধ। অনেকেই লুকিয়ে বিক্রি করে। দেখামাত্রই তাদের নিষেধ করা হয়। আমরা কবুতর, খরগোশ, গিনিপিগসহ অন্যান্য বৈধ পাখি ও প্রাণী বেচাকেনা করি।’
বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল ঢাকার বন্য প্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানা বলেন, দেশি পাখি বিক্রি বন্য প্রাণী আইনে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ওই হাটে অবৈধভাবে দেশি পাখি বিক্রি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।