বাইক না দেওয়ায় আত্মহত্যার চেষ্টা, পাওয়ার তিন দিনের মাথায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত রাজন শেখ ও সোহাগ প্রামাণিক (ডানে)
ছবি: সংগৃহীত

দশম শ্রেণিতে পড়া রাজন মা–বাবার একমাত্র সন্তান। মা–বাবার কাছে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার বায়না ধরে। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় মা–বাবা পাত্তা দেননি। একপর্যায়ে ঘুমের বড়ি ও গলায় দড়ি দিয়ে দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় রাজন। বাধ্য হয়ে তিন দিন আগে মোটরসাইকেল কিনে দেন মা-বাবা। সেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বন্ধুসহ রাজন নিহত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের শান্তিনগর সেতুর পাশে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে গুরুতর আহত হয়ে দুজন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।

নিহত ব্যক্তিরা হলো সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের গোপীনাথদিয়া গ্রামের লাল মিয়া শেখের ছেলে রাজন শেখ (১৬) ও একই উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামের রব প্রামাণিকের ছেলে সোহাগ প্রামাণিক (১৬)। রাজন আলীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সোহাগ শহরের শ্রীপুর বাজারে একটি গ্যারেজে কাজ করত। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সোহাগ তৃতীয়।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অনেক আগে থেকেই মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য বায়না ধরে রাজন। বয়স কম হওয়ায় স্বজনেরা রাজি হননি। একপর্যায়ে ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে রাজন। চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পর কয়েক দিন স্বাভাবিক ছিল। সপ্তাহখানেক আগে সে আবার আত্মহত্যার হুমকি দেয়। মা-বাবা বিষয়টি পাত্তা দেননি। গত শুক্রবার সকালে ঘরের দরজা আটকে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় রাজন। দরজা ভেঙে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই দিনই চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরে সে।

স্বজনেরা জানান, হাসপাতাল থেকে ফেরার পর গত রোববার তাকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেওয়া হয়। আজ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে রাজন বন্ধু সোহাগকে নিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়। আলীপুর ইউনিয়নের শান্তিনগর সেতুর পাশে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে সড়কের পাশে ছিটকে পড়ে। গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

রাজনের চাচা আরিফ শেখ প্রথম আলোকে বলেন, রাজনের বাবা ঢাকায় চীনের একটি প্রতিষ্ঠানে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করেন। সে মা-বাবার একমাত্র সন্তান। অনেক দিন ধরে মোটরসাইকেল কিনে দিতে মা-বাবাকে চাপ দিচ্ছিল। রাজি না হওয়ায় দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়া হয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেই মোটরসাইকেলে তার প্রাণ গেল।

সোহাগের খালা রিনা খাতুন বলেন, খুব সকালে রাজন বাড়িতে এসে সোহাগকে নিয়ে যায়। রোজার সময় বিকেলে ঘোরাঘুরি করা যাবে না, এ জন্য সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছে বলে সে জানায়। ঘুম থেকে উঠে এসে দুর্ঘটনায় দুজনের প্রাণ গেল। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এসেছেন।

আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কার সিদ্দিক বলেন, পরিবারকে জিম্মি করে মোটরসাইকেলটি কেনা হয়েছিল। সেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজন মারা গেল। স্কুলগামী কিশোরদের মোটরসাইকেল কিনে না দিতে তাঁরা সব সময় প্রচারণা চালান। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাসহ বিভিন্ন সভায় বিষয়টি নিয়ে বলা হয়। মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার আগে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে।

সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই দুজন মারা গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মাথায় আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।

সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন রেজা প্রথম আলোকে বলেন, লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।