ঘাস কাটতে বেরিয়ে নিখোঁজ, পরদিন কিশোরের লাশ উদ্ধার
গতকাল বুধবার দুপুরে গরুর জন্য ঘাস কাটতে বের হয়েছিল সিফাত হোসেন ওরফে শুভ (১৬) নামের এক কিশোর। বিকেল-সন্ধ্যা-রাত পেরিয়ে গেলেও ওই কিশোর বাড়ি ফিরছিল না। নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি শেষে পরদিন ওই কিশোরের লাশ পাওয়া যায় একটি পরিত্যক্ত ব্যাটারি কারখানার ভেতরে।
সিফাত হোসেন নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদীর নুরালাপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া এলাকার সুন্দর আলীর ছেলে। সে মাধবদীর এসপি ইনস্টিটিউট নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
থানা-পুলিশকে কিছু না জানিয়ে সিফাতের লাশ বাড়িতে নিয়ে স্বজনেরা গোসল দেওয়ার সময় দেখেন, তাঁর ঘাড় ভাঙা এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন। এর পরপরই পরিবারের সদস্যরা দাবি করছেন, কিশোরটি হত্যাকাণ্ডের শিকার।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদীর নুরালাপুর এলাকার এক পরিত্যক্ত কারখানার ভেতর থেকে ওই কিশোরের লাশ উদ্ধার করেন স্বজনেরা। পরে লাশ বাড়িতে নিয়ে গোসল দেওয়ার সময় শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কল দেন ওই কিশোরের এক স্বজন। তাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে মাধবদী থানার পুলিশ বেলা তিনটার দিকে তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠান।
নিহত কিশোরের স্বজন ও স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল দুপুরে গরুর জন্য ঘাস কাটার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল সিফাত। এরপর থেকে তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্ধ্যার পর থেকে স্বজনেরা তাকে আশপাশের বাড়িঘর ও আত্মীয়দের বাড়িঘরে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই পরিত্যক্ত কারখানার ভেতরে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় কয়েকজন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়ে লাশ নিয়ে বাড়িতে ফেরেন। আইনি ঝামেলা এড়াতে তারা পুলিশে খবর দেননি। পরিত্যক্ত কারখানাটি জজ ভূঞা গ্রুপের মালিকানাধীন। একটি চায়নিজ কোম্পানি এটি ভাড়া নিয়ে ব্যাটারি তৈরি করলেও সম্প্রতি তারা এই কারখানা ছেড়ে দিয়েছেন।
বাড়িতে ফিরে স্বজনেরা কবর পর্যন্ত খুঁড়ে ফেলেছিলেন। এর আগে লাশের গোসল দেওয়ার সময় স্বজনেরা দেখেন তাঁর ঘাড় ভাঙা এবং দুই হাত ও গলায় আঘাতের চিহ্ন। এসব আঘাতের চিহ্ন দেখে এটি হত্যাকাণ্ড বলে তাদের সন্দেহ হয়। ওই সময় কিশোরের এক মামা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ কল দিয়ে ঘটনা জানান। তাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে মাধবদী থানার পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। পরে তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠান তারা। আগামীকাল ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কিশোরের বাবা সুন্দর আলী বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আমার ছেলে মারা গেছে। তাই পুলিশে খবর না জানিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু গোসল দেওয়ার সময় আমরা তাঁর শরীরের কয়েক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখি। কে বা কারা আমার ছেলেকে হত্যা করে সেখানে ফেলে রেখেছে জানা না। আমি ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকিবুজ্জামান জানান, আমরা কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করতে পারিনি, ৯৯৯–এর মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে লাশ দেখি। শরীরে আঘাতের চিহ্ন যা আছে, তাতে তাঁর মৃত্যু রহস্যজনক মনে হয়েছে আমাদের। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে বোঝা যাবে, তাঁর সঙ্গে কী ঘটেছিল। এ ঘটনায় আমরা এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।