‘আমি দুই ছেলেকে ছাড়া কেমন করে বাঁচব?’

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সাঙ্গু নদে ডুবে মারা গেছে তাঁর দুই ভাই ওমর ফারুক (বাঁয়ে) ও কামরুল হাসানছবি: সংগৃহীত

পুরো বাড়ির লোকজন শোকে চুপচাপ। শুধু মা ফাতেমা সুলতানা কেঁদে চলেছেন। থেমে থেমে বিলাপ করে তিনি বলছেন, ‘আমি দুই ছেলেকে ছাড়া কেমন করে বাঁচব? আল্লাহ কেন আমার দুই ছেলেকে একসঙ্গে নিয়ে গেলেন?’ গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার নয়াহাটে সাঙ্গু নদে ডুবে মারা গেছে তাঁর দুই সন্তান কামরুল হাসান (১১) ও ওমর ফারুক (৮)।

কামরুল ও ফারুক উপজেলার নয়াহাটের কুয়েতপ্রবাসী আবদুল মোনাফের ছেলে। কামরুল বাজালিয়া রাইজিং স্টার স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার ছোট ভাই ওমর ফারুক স্থানীয় একটি মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণিতে পড়ত।

আজ মঙ্গলবার সকালে আবদুল মোনাফের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সবাই চুপচাপ। কয়েকজন প্রতিবেশী মাটির তৈরি পুরোনো বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। বাড়ির ভেতরের একটি কক্ষে কামরুল ও ফারুকের মা ফাতেমা সুলতানার কান্না থামছে না। দুই-একজন প্রতিবেশী তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

কথা হয় আবদুল মোনাফের বড় ভাই আবদুল আজিজের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই মোনাফের দুই ছেলে ও ৯ মাস বয়সী এক মেয়ে। দুই ছেলেই একসঙ্গে পানিতে ডুবে মারা গেল। ওই ছেলে দুটি প্রতিদিন পুরো বাড়ি হইচই করে মাতিয়ে রাখত। এখন বাড়িতে নীরবতা নেমে এসেছে। দুই ছেলেকে হারিয়ে তাদের মা পাগলপ্রায়। এই খবরে বিদেশে বসে ভাই আমার কেঁদে-কেটে অস্থির।’

পুরানগড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আ ফ ম মাহবুবুল হক সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চার শিশু সাঙ্গু নদে গোসল করতে নামে। দুই শিশু গোসল শেষে বাড়িতে ফিরে আসে। তবে দুই ভাই কামরুল ও ফারুক ফেরেনি। পরিবারের সদস্যরা তখন তাদের খোঁজ করেন। বিকেল পাঁচটার দিকে সাঙ্গু নদে দুই ভাইয়ের স্যান্ডেল ভাসতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। পরে সাঙ্গু নদের গর্তে জাল ফেলে দুই ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়।