খুলনায় কি অস্তিত্ব–সংকটে পড়েছে জাতীয় পার্টি

জাতীয় পার্টির লোগো

সংসদ সদস্য, কাউন্সিলর থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুতেই একসময় দাপট ছিল দলটির। ছিল জনসমর্থনও। তবে অবস্থা পাল্টে এখন জনসমর্থন কমে গেছে। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে খুলনা পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে রূপান্তর, খুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মেডিকেল কলেজ স্থাপন, জাদুঘরসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজ করা হয়। কিন্তু এত কিছুর পরও মানুষের মন থেকে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যেতে বসেছে।

কারণ হিসেবে দলটির নেতারা বলছেন, প্রায় ৩২ বছর ধরে ক্ষমতায় নেই জাতীয় পার্টি। নতুন প্রজন্মের ওপর এর একটা প্রভাব পড়ছে। নতুন প্রজন্ম জানে না, এরশাদের আমলে খুলনায় কেমন উন্নয়ন হয়েছে। আগে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের নেতিবাচক ভাবমূর্তিও দলটির সমর্থকদের ওপর প্রভাব ফেলেছে। তা ছাড়া বর্তমান সরকারের বিরোধী দলে থাকাটাকে ‘দালাল’ হিসেবে মনে করেন মানুষ। এ কারণেও জনসমর্থনে ভাটা পড়েছে বলে মনে করছেন নেতারা।

আরও পড়ুন

২০১৮ সালের খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এস এম শফিকুর রহমান। পেয়েছিলেন মাত্র ১ হাজার ৭২ ভোট। এবারের নির্বাচন ঘিরে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সাংগঠনিকভাবে বেশ সুশৃঙ্খল ও উজ্জীবিত ছিল জাতীয় পার্টি। স্থানীয় সব পর্যায়ের নেতা–কর্মী নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। কেন্দ্র থেকেও নেতারা এসে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু ভোটের ফলাফলে যুক্ত হয়েছে মাত্র ১৮ হাজার ৭৪ ভোট। এবার ভোট বাড়লেও তৃতীয় হয়েছে দলটি।

অন্যদিকে গতবারের শফিকুর রহমান এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে ভোট পেয়েছেন ১৭ হাজার ২১৮ ভোট। গতবারের তুলনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এবার ১৬ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন

সিটি নির্বাচনে এবারের মেয়র প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম ২২ বছর ধরে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি। নির্বাচনে ভরাডুবি নিয়ে তিনি বলেন, ‘ইভিএমে কীভাবে ভোট হয়েছে, বুঝতে পারছি না। কারণ, আমার এত কম ভোট পাওয়ার কথা নয়। অন্তত দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে নৌকার কাছাকাছি ভোট পাওয়ার কথা। যে ভোট পেয়েছি, সেটা আমার ব্যক্তিগত। সেখানে দলের কোনো ভোট পাইনি।’

ভোট কম পাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ এখন জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের বি দল মনে করেন। এরশাদ যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন দায়িত্ব পালনকারীরা দলটিকে গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করেনি। এ জন্য দলের জনসমর্থন কমে যাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

আরও পড়ুন

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন আবদুল গফ্ফার বিশ্বাস। তখন তিনি দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও খুলনা মহানগরের সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৮ সালে খুলনা-৩ (সিটি করোপরেশন ও দিঘলিয়ার একাংশ) আসন থেকে সংসদ সদস্য হন। এক-এগারোর পরবর্তী সময়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান আবদুল গফ্ফার বিশ্বাস। আবার রাজনীতিতে ফিরতে চেয়েছিলেন। এবারের সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হয়ে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জমা দেননি।

নির্বাচনে ভরাডুবির বিষয়ে আবদুল গফ্ফার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, খুলনায় জনসমর্থন হারানোর অন্যতম কারণ কেন্দ্রীয় নেতাদের খামখেয়ালি ও দূরদর্শিতার অভাব। প্রার্থিতা বাছাইয়ে ভালো ও যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে টাকাওয়ালা ব্যক্তিদের বাছাই করা হয়। ভালো ও যোগ্য প্রার্থী না দিতে পারায় মানুষের কাছে দল সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে। এ জন্য দলের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। জনসমর্থন কমে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

তবে জাতীয় পার্টির জনসমর্থন একেবারে কমে গেছে, এমনটি মানতে নারাজ দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও চেয়ারম্যানের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম থেকেই জাতীয় পার্টির জনসমর্থন গ্রাম পর্যায়ে বেশি। শহরে বরাবরই সমর্থন কম। এ জন্য মেয়র নির্বাচনের ফলাফল দিয়ে জনসমর্থন বিচার করা যাবে না।

তিনি বলেন, ‘৩২ বছর ক্ষমতায় না থাকা দলটি এখনো টিকে আছে, এটিই অনেক কিছু। অনেক দল ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রে এখনো এমনটি হয়নি।’

আরও পড়ুন