লৌহজংয়ে দুই পরিবহনের দ্বন্দ্বে বাস বন্ধ চার দিন, যাত্রীদের দুর্ভোগ

দুই পরিবহনের দ্বন্দ্বে ঢাকা-মাওয়া ও লৌহজং-বালিগাঁও সড়কে চার দিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খেতেরপাড়া বাসস্ট্যান্ডে
ছবি: প্রথম আলো

দুই পরিবহনের দ্বন্দ্বে ঢাকা-মাওয়া ও লৌহজং-বালিগাঁও সড়কে চার দিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ আছে। এর ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ওই সড়ক দুটি ব্যবহারকারী পথচারীদের। ওই পথে বাস পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠান দুটি হলো গাঙচিল পরিবহন ও ইলিশ পরিবহন। বাস বন্ধ করা নিয়ে পরিবহন দুটি পরস্পরকে দোষারোপ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুটি পরিবহনের বাস বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। কে কার আগে রাস্তা দখল করে গাড়ি চালাবে, যাত্রী ওঠাবে, তা নিয়ে সব সময় চলে প্রতিযোগিতা। গত রোববার দুপুরে খেতেরপাড়া স্ট্যান্ড থেকে গাঙচিল পরিবহনের একটি বাসকে আগে যেতে বাধা দেয় ইলিশ পরিবহনের একটি বাস। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে ইলিশ পরিবহনের সুপারভাইজার দেলোয়ার হোসেন গাঙচিল পরিবহন বাসের সহকারী শিপন নামের একজনকে মারধর করেন। এ ঘটনার জের ধরে ওই দিন সন্ধ্যায় আবারও দুই পরিবহনের শ্রমিকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর পর থেকেই বাস বন্ধ আছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে লৌহজংয়ের খেতেরপারা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গাঙচিল পরিবহনের বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। যাত্রীরা ব্যাটারিচালিত অটোতে করে ভেঙে ভেঙে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হচ্ছে।
এ সময় কথা হয় ফাতেমা বেগম (৬০) নামের ঢাকাগামী এক যাত্রীর সঙ্গে। লৌহজংয়ে বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন তিনি। ফাতেমা বলেন, ‘যেদিন আসলাম সেদিন বাস বন্ধ ছিল। আজ যাচ্ছি, আজও বন্ধ। শরীরও ভীষণ অসুস্থ। উপায় নেই, অটোরিকশায় করে যাব ভাবছি। কষ্টটা অনেক বেশি হয়ে যাবে।’

চার দিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ থাকার পরও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন যাত্রীরা। আজহার নামের ঢাকাগামী আরেক যাত্রী কয়েকজন বলেন, ‘আমরা যাঁরা প্রতিদিন ঢাকায় যাতায়াত করি, তাঁরা পড়েছি বিপাকে। বাসে লৌহজং থেকে গুলিস্থান যেতে ভাড়া লাগত ১০০ টাকা। সময় লাগতো সোয়া এক ঘণ্টা। ভেঙে ভেঙে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দুই গুণের বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। সময়ও লাগছে দুই ঘণ্টার মতো।’

গাঙচিলের মালিক-শ্রমিকদের দাবি, তাঁরা ৩৫ বছর ধরে এ পথে বাস চালিয়ে আসছেন। যখন রাস্তা কাঁচা ছিল, তখন থেকে। অথচ ইলিশ পরিবহনের চালক, শ্রমিকেরা এ পথে আসার পর থেকে তাঁরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বিনা উসকানিতে গাঙচিল বাসের শ্রমিকদের যখন-তখন মারধর করা হচ্ছে। গাঙচিল পরিবহনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলমান পরিস্থিতিতে তারা বাস চালাবে না। ইলিশ পরিবহন বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি শ্রমিককে মারধর করা ইলিশের সুপারভাইজারের বিচার করতে হবে।

পরিবহন দুটির সংশ্লিষ্টরা বলেন, ঢাকা-মাওয়া ও লৌহজং-বালিগাঁও সড়কে গাঙচিল পরিবহনের বাসের সংখ্যা ৭৩টি এবং ইলিশ পরিবহনের ১৫টি। গাঙচিল বাসের আসনসংখ্যা ৪০, আর ইলিশ পরিবহনের বাসের আসন ৭০ জনের।

গাঙচিল পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন মোড়ল বলেন, ‘আগে আমাদের যাত্রীসেবায় কিছু ভুলত্রুটি ছিল। সমস্যার সমাধান করে যাত্রীসেবার মান বাড়ানো হয়েছে। আমরা অনুমতি নিয়ে বাস চালাচ্ছি। ইলিশের কোনো অনুমতি নেই। তারপরও সড়কে বেপরোয়া আচরণ করছে। ইলিশের বাস বন্ধ ও অভিযুক্তদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বাস বন্ধ থাকবে।’

উল্টো অভিযোগ ইলিশ পরিবহনের সভাপতি আলী আকবর হাওলাদারের। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাস গাঙচিলের লোকজন বন্ধ করে দিতে চায়। আমাদের বাস দেখলেই ভাঙচুর করবে। তাই বন্ধ রেখেছি। চলমনার অচলাবস্থার মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত গাড়ি বন্ধ থাকবে।’

সমস্যা সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল আউয়াল। প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাস বন্ধের বিষয়টি বুধবার জানতে পেরেছি। আমরা দুই পক্ষকে ডাকব। তাদের ডেকে বসিয়ে বিষয়টি সুরাহা করে বাস চলাচল দ্রুত শুরু করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

এর আগে ২০২২ সালের নভেম্বরে আগে যাওয়া এবং যাত্রী ওঠানো নিয়ে দুই পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। এর জের ধরে তাঁদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই সময়ও দুই দিন বাস চলাচল বন্ধ ছিল।