ধর্ম অবমাননার মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল

ধর্ম অবমাননার মামলায় ১৯ দিন কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। ওই মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে ধর্ম অবমাননার মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জ আমলি আদালত-১-এর বিচারক জশিতা ইসলাম তাঁকে অব্যাহতির আদেশ দেন।

এর আগে ২২ মার্চ ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ বাদী হয়ে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

আরও পড়ুন

ধর্ম অবমাননার মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী শাহীন মোহাম্মদ আমানউল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৮ আগস্ট পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। গতকাল হৃদয় মণ্ডল আদালতে হাজিরা দিতে এলে বিষয়টি আবার আদালতে তোলা হয়। সেখানে মামলার বাদী ও বিবাদী উপস্থিত ছিলেন। বাদীর কোনো আপত্তি না থাকায় আদালতের বিচারক তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন।

মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর আজ বুধবার হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একজন শিক্ষক। একটি মিথ্যা অভিযোগে আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। ১৯ দিন জেল খাটতে হয়েছে। মানুষের চোখে ছোট হতে হয়েছে। ভেতরে চাপা কষ্ট ছিল। সব সময় অশান্তিতে ভুগতাম। অপরাধ না করেও অপরাধী ছিলাম। আজকে আমার ওপর আনা সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সব দোষ থেকে মুক্ত হয়েছি। এখন মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াতে পারব। সবাইকে বলতে পারব, আমি অপরাধী নই। আমি অপরাধ করিনি।’

আরও পড়ুন

হৃদয় মণ্ডল আরও বলেন, জামিনে বেরিয়ে আসার পর তাঁর বাড়ির ফটকে দাঁড়িয়ে হুমকি-ধমকি দেওয়া হতো। ভয়ে তিনি ঘর থেকে বের হতেন না। তিনি জানান, প্রতিবেশীসহ সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে চান তিনি। ২৪ বছর শিক্ষকতা করেছেন। সাড়ে পাঁচ বছরের মতো চাকরির বয়স আছে। বাকি জীবন সম্মান নিয়ে বাঁচতে চান তিনি।

২০ মার্চ দশম শ্রেণির মানবিক শাখার বিজ্ঞানের ক্লাস নিচ্ছিলেন হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। সেখানে বিজ্ঞান ও ধর্ম বিষয়ে তাঁর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের পক্ষে-বিপক্ষে কথোপকথন হয়। এক শিক্ষার্থী ওই কথোপকথনের ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তী সময়ে প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দীনকে বিষয়টি জানানো হয়। প্রধান শিক্ষক সেদিনই হৃদয় মণ্ডলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন এবং শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে বলেন। তবে শিক্ষার্থীরা স্থানীয় কয়েকজন ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানায়। পরদিন সকালে তারা বিদ্যালয়ে এসে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আরও পড়ুন

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ২২ মার্চ হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই দিনই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯ দিন কারাগারে থাকার পর ১০ এপ্রিল জামিনে মুক্তি পান হৃদয় মণ্ডল। ১১ এপ্রিল সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হাই তালুকদারকে প্রধান করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ২০ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। তদন্তে হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের প্রমাণ পায়নি কমিটি।