ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় পুলিশ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার বিকেলে পৌর শহরের পশ্চিম বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সোনাগাজী সার্কেল) মো. মাশকুর রহমানসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগানের গুলি ও টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে চার থেকে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ।
আজ সকাল থেকে বিএনপি ও ছাত্রলীগের সভাকে কেন্দ্র করে পৌরসভায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। বেলা ১১টা থেকে পৌর এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারির কথা বলা হলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তা অস্বীকার করেন।
পুলিশ ও উভয় দলের নেতা-কর্মীরা জানান, বিএনপি ও ছাত্রলীগের সভাকে কেন্দ্র করে পৌর শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকাল থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দফায় দফায় পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করলেও বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি। বিকেল চারটার দিকে পৌর শহরের শেষ সীমানায় ভৈরব রাস্তার মাথায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপি। উপজেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহানা আক্তার, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহমেদ, ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) আসনের সমন্বয়ক আকবর হোসেন প্রমুখ। দুই দলের নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করেন।
সমাবেশ শেষে বিকেল পাঁচটার দিকে বিএনপির কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পুলিশও পাল্টা আক্রমণ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শটগানের গুলি ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে এএসপি মো. মাশকুর রহমান, উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল করিম, এসআই মাহবুব আলম সরকারের নাম জানা গেছে। আহত সবাইকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে বিএনপির কর্মীদের সংঘর্ষ চলাকালে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আহত জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. মাশকুর রহমানকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শটগানের গুলি ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে।
পুলিশ সদস্যদের আহত হওয়ার খবর পেয়ে তাঁদের দেখতে পুলিশ সুপার মো. জাকির হাসান তাৎক্ষণিকভাবে সোনাগাজী মডেল থানায় ছুটে আসেন। সন্ধ্যায় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, বিএনপির সমাবেশ শেষে কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করেন। তাঁদের হামলায় পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে খুব বেগ পেতে হয়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। সব বিষয় খতিয়ে দেখে বলা হবে বলে তিনি জানান।
পুলিশের অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক খুরশিদ আলম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সমাবেশ শেষে নেতা-কর্মীদের তাঁরা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। শুনেছেন কিছু উচ্ছৃঙ্খল দুষ্কৃতকারী সমাবেশ শেষে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে আহত করেছেন। হামলাকারী কারা, তিনি জানেন না। তবে হামলার সঙ্গে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়িত নন।