রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে খুন হননি সাবেক যুবলীগ নেতা খাইরুল, দাবি সংসদ সদস্য ওদুদের

সংবাদ সম্মেলন বক্তব্য দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ। শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ওয়ালটন মোড়ে নিজ কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাবেক যুবলীগ নেতা খাইরুল আলম ওরফে জেম হত্যাকাণ্ড কোনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে হয়নি। পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল ওদুদ।

খাইরুল আলম হত্যার বিচারের দাবিতে শনিবার শহরের ওয়ালটন মোড়ে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এতে আবদুল ওদুদ বলেন, খুন হওয়ার আগে খাইরুল আলম ফেসবুক লাইভে গিয়েছিলেন। তিনি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছিলেন। এসব বিশ্লেষণ করলেই জানা যাবে এ হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং এর পেছনে কারা জড়িত।

গত ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উদয়ন মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খাইরুল আলম নিহত হন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগের সহশ্রমবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি শিবগঞ্জ পৌরসভার মর্দনা গ্রামে হলেও তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে বাস করতেন।

এ ঘটনায় ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সামিউল হক ওরফে লিটনসহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন খাইরুল আলমের ভাই মনিরুল ইসলাম। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেসবাহুল হক ওরফে টুটুলসহ পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া মোখলেসুর রহমান, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সামিউল হকসহ বেশ কয়েকজন উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে আছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ বলেন, একটি মহল ও দুয়েকটি সংবাদমাধ্যম খাইরুল আলম হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা খাইরুলকে সন্ত্রাসী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তিনি কী কী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন, তা তারা প্রমাণ করতে পারবে না। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি আছেন, যিনি চিহ্নিত একজন মাদকসম্রাট এবং খাইরুল আলম হত্যা মামলার আসামি; তিনি একজন সাংবাদিকের সঙ্গে সখ্য গড়ে এসব অপপ্রচারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘খুন হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত আবেদন জানিয়েছিলেন খাইরুল আলম। এতে তিনি লিখেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন ঢাকায় কর্মরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা। এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানাই। এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিগগিরই দেখা করব।’

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য বাদীকে প্ররোচিত করে খাইরুল আলম হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন, এমন ব্যক্তিকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে আবদুল ওদুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, খাইরুল আলমের বড় ভাই মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। এখানে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেসবাহুল হক তাঁর হাত ধরে দলে ঢুকেছিলেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। এ অভিযোগ সত্য নয়।

খাইরুল আলম হত্যাকাণ্ড নিয়ে দলে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মু. জিয়াউর রহমান মন্তব্য করেছেন। তাঁর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আবদুল ওদুদ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান মামলার ১ নম্বর আসামি হলেও এ হত্যাকাণ্ড আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে ঘটেনি।