গোখাদ্যের চড়া দামে প্রভাব পড়তে পারে পাবনার কোরবানির হাটে

বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার পশুর হাটগুলোয় তুলনামূলকভাবে গরু কম উঠছে। তবে দাম চাওয়া হচ্ছে বেশি। গত মঙ্গলবার করমজা চতুরহাটে।ছবি: প্রথম আলো

দেশের অন্যতম গরু উৎপাদনকারী এলাকা পাবনার বেড়া উপজেলায় কোরবানির পশু প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় খামারিরা। তবে গোখাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় এবার লোকসানের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। প্রান্তিক এসব খামারির দাবি, গোখাদ্যের এমন উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়বে এবারের কোরবানির হাটে।

স্থানীয় খামারি, গরু ব্যবসায়ী ও পালনকারীরা বলেন, এক বছর ধরে গোখাদ্যের দাম বাড়তে বাড়তে তা নাগালের বাইরে চলে গেছে। এর ওপর কোরবানির হাটকে সামনে রেখে এ দাম আরও বাড়তে শুরু করেছে। ভুসি, কাঁচা ঘাস, খড়, খৈল, চিটাগুড়, ধানের কুড়া, খুদসহ সব ধরনের গোখাদ্যের দাম আগের বছরের তুলনায় দেড় থেকে দ্বিগুণ বেড়েছে। এর কারণে এবার গরুর প্রত্যাশিত দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁরা।

বেড়া পৌর এলাকার বনগ্রাম মহল্লার খামারি মাহফুজা খানম বলেন, ‘কোরবানির হাটকে সামনে রেখে আমার খামারে চারটি ষাঁড় প্রস্তুত করেছি। একেকটির ওজন ২০ থেকে ২২ মণ। ১৬ লাখ টাকায় এগুলো বেচার ইচ্ছা আছে। অন্য বছরগুলোয় এ সময়ে বাড়ি (খামার) এসে দরদাম করলেও এবার ব্যাপারীরা খুব কম আসছেন। শুনেছি, এবার গরু পালন (উৎপাদন) হয়েছে অনেক বেশি। তারপরও বেশি দামে গোখাদ্য খাইয়ে শেষ পর্যন্ত ন্যায্য দাম পাব কি না, চিন্তায় আছি।’

চিন্তিত গরুর মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও। কোরবানির হাটকে সামনে রেখে প্রায় ২০ বছর ধরে গরুর ব্যবসা করে আসছেন বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লার বাসিন্দা আবদুল মোমিন। তিনি বলেন, এবার বেড়াসহ আশপাশের এলাকায় তুলনামূলকভাবে গরুর সংখ্যা বেশি। তবে গোখাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে গরু পালনের খরচ অনেকাংশে বেড়েছে। তাই কোরবানির লাভ করা নিয়ে ভয়ে আছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।

কোরবানির আগে পশু বিক্রিতে লাভ করা নিয়ে ভয়ে আছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
ছবি: প্রথম আলো

গরুর এই মৌসুমি ব্যবসায়ী গত বছর প্রায় ১০০ গরু কিনে ঢাকার বিভিন্ন কোরবানির হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। কিন্তু এবার বাজার অনিশ্চিত এবং গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় মাত্র ১৫ থেকে ২০টি গরু কিনে ঢাকায় পাঠানোর কথা ভেবেছেন আবদুল মোমিন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেড়া উপজেলায় এবার কোরবানির উপযোগী গরুর সংখ্যা প্রায় ৩৪ হাজার ৫১৫। এ ছাড়া মহিষ ৬২৩টি, ছাগল ৪৪ হাজার ৫৪২টি ও ভেড়া ৬ হাজার ৯৫৯টি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এবার উপজেলাটিতে কোরবানি উপযোগী মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ৮৬ হাজার ৬৩৯। তবে খামারিদের সংগঠন ও গরু ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, এ উপজেলায় কোরবানির উপযোগী গবাদিপশুর প্রকৃত সংখ্যা কমপক্ষে এক লাখ।

উপজেলায় এবারের কোরবানির জন্য সব মিলিয়ে ৪৪ হাজার ৬৪৭টি গবাদিপশুর চাহিদা থাকলেও পালন করা হয় ৮৬ হাজার ৬৩৯টি। অর্থাৎ ৪১ হাজার ৯৯২টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। উদ্বৃত্ত পশুগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাবে।

গত বছরগুলোর তুলনায় বেড়ায় এবার কোরবানির পশুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি বলে জানান উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘উপজেলায় এবারের কোরবানির জন্য সব মিলিয়ে ৪৪ হাজার ৬৪৭টি গবাদিপশুর চাহিদা থাকলেও পালন করা হয় ৮৬ হাজার ৬৩৯টি। অর্থাৎ ৪১ হাজার ৯৯২টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। উদ্বৃত্ত পশুগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাবে। চড়া গোখাদ্যের কারণে এবার খামারিদের গবাদিপশু পালনে ব্যয় অনেক বেড়েছে। তাই উপযুক্ত দাম না পেলে খামারিদের লোকসান হবে।’

এদিকে বেড়া ও এর আশপাশের পশুর হাটগুলোয় কোরবানির আগেই তুলনামূলক চড়া দামে গরু বিক্রি হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও গরুর ব্যাপারীরা। তাঁদের মধ্যে অনেক ব্যাপারী উপজেলার বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কিনতে শুরু করেছেন। তাঁরা পশুর হাটগুলো থেকেও গরু কিনছেন। মৌসুমি ব্যাপারীরা এসব গরু কিনছেন মূলত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের কোরবানির হাটে বেশি দামে বিক্রির আশায়।

সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় পশুর হাট বলে পরিচিত বেড়া পৌর করমজা চতুরহাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গরুর সরবরাহ তুলনামূলকভাবে কম এবং দামও কিছুটা চড়া। হাটে থাকা গরুর ব্যাপারী ও হাট কমিটির সদস্যরা জানান, গোখাদ্যের অস্বাভাবিক দামের কারণে এবার খামারিদের গরু পালনের খরচ অনেক বেড়েছে। এ কারণে হাটে গরু এনে পালনকারীরা বেশি দাম চাইছেন। আবার বেশির ভাগ খামারি ও গরু পালনকারী কোরবানির সময় দাম আরও বাড়তে পারে—এ ধারণা করে হাটে এখনই কোনো গরু আনছেন না। তাই হাটে গরুর আমদানি কম।