ইউএনওর অশ্লীল ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি, দেহরক্ষী গ্রেপ্তার

নড়াইল জেলার মানচিত্র

নড়াইলের একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চাঁদাবাজ চক্রের ফাঁদে পড়ে ইউএনওর স্ত্রী একটি ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েক দফায় ১০ লাখ টাকা দেন। এরপর আরও টাকা চাওয়ায় থানায় মামলা করেছেন ওই ইউএনওর স্ত্রী।

মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে ইউএনওর দেহরক্ষী আনসার সদস্য আকাশ বিশ্বাস জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আকাশ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর গ্রামের বাসিন্দা। আকাশ প্রায় তিন বছর ধরে নড়াইলের ওই উপজেলার ইউএনওর দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ভুক্তভোগী ইউএনও গত বছরের শেষের দিকে ইউএনও হিসেবে ওই উপজেলায় যোগ দেন।

শুক্রবার দুপুরে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। ওসি বলেন, ১২ মার্চ ইউএনওর স্ত্রী মামলাটি করেন। মামলায় আকাশ বিশ্বাস চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়। ওই দিনই তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে পুরো চাঁদাবাজ চক্রকেই শনাক্ত করা হয়েছে। শিগগিরই পুরো বিষয়টি উদ্‌ঘাটন করা হবে।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে বলা হয়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিদেশি একটি নম্বর থেকে ইউএনওর ব্যক্তিগত নম্বরে কল করে এক ব্যক্তি দাবি করেন, তাঁর কাছে ইউএনওর অশ্লীল ভিডিও আছে। ১০ লাখ টাকা না দিলে ভিডিওটি ছড়িয়ে দেওয়া হবে এবং ইউএনওর ওপর হামলা করা হবে। কিছুক্ষণের মধ্যে ইউএনওর ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক মুঠোফোন নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে ও ইউএনওর স্ত্রীর ফেসবুক মেসেঞ্জারে ভিডিওটি পাঠায় চাঁদাবাজেরা। পরে তাঁরা ভিডিওটি মুছে দেন। এরপর একটি বিকাশ নম্বর দিয়ে টাকা পাঠাতে বলে। ইউএনওর স্ত্রীর ওই বিকাশ নম্বরে কথা বললে তারা ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের একটি হিসাব নম্বর দিয়ে আধা ঘণ্টার মধ্যে ১০ লাখ টাকা পাঠাতে বলে এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকে। বাধ্য হয়ে ওই দিন বিকেল থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত কয়েক দফায় ইউএনওর স্ত্রী ১০ লাখ টাকা পাঠান। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি ও ৫ মার্চ চক্রটি আবার টাকা দাবি করে।

মামলায় ইউএনওর স্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘আমার স্বামীর মানসম্মানসহ তাঁর জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাৎক্ষণিকভাবে অন্যের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের বুথে গিয়ে ওই টাকা পাঠাই। আমার ধারণা, আমাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্য আকাশ বিশ্বাসের সহযোগিতায় অজ্ঞাতনামা চক্রটি প্রতারণা করে আমাদের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে।’

এ বিষয় কথা বলতে ভুক্তভোগী ইউএনও ও তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তাঁরা ধরেননি। তবে আকাশ বিশ্বাসের বড় ভাই মিথুন বিশ্বাস বলেন, বাড়িতে পাঁচ-ছয় দিন ছুটিতে থাকার পর কর্মস্থলে যাওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে কথা বললে আকাশ জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয় কিছুই জানেন না। তিনি নির্দোষ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক অমিত কুমার বিশ্বাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আকাশকে রিমান্ডে নিতে রোববার আদালতে আবেদন করা হবে বলে তিনি জানান।