বগুড়ায় বিএনপির সমাবেশ ভন্ডুল করতে নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় ও গ্রেপ্তারের অভিযোগ

পুলিশের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলায় গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানায় বগুড়া জেলা বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিকেলে বগুড়া শহরের নওয়াববাড়ি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ায় বিএনপির সমাবেশ ভন্ডুল করতে ‘গায়েবি’ মামলায় পুলিশ গণগ্রেপ্তার ও ধরপাকড় করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। গত বুধবার রাত থেকে আজ শুক্রবার ভোর পর্যন্ত জেলাজুড়ে অর্ধশত নেতা-কর্মীকে আটক করে ‘গায়েবি’ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, চিহ্নিত অপরাধী, দাগি সন্ত্রাসী, অস্ত্রবাজ, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশের বিশেষ অভিযান অনেক আগে থেকেই চলমান আছে। কেউ যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারেন, সে জন্য থানায় থানায় বিশেষ অভিযান জোরদার করা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কিংবা বিএনপির সমাবেশকে ভন্ডুল করতে কোনো ধরনের অভিযান পরিচালনার অভিযোগ সত্য নয়। অপরাধী ছাড়া নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়ে থাকলে বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বগুড়া শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে জেলা বিএনপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলায় গণগ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানানো হয়। নেতারা বলেন, বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে এবং অবৈধ সরকারের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই পুলিশ ‘গায়েবি’ মামলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ৭ জন, আদমদীঘির ২ জন, দুপচাঁচিয়ার ২ জন, কাহালুর ২ জন, শাজাহানপুর উপজেলার ১ জনসহ ১৪ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ওই সংবাদ সম্মেলনে বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, সাবেক সহসভাপতি ফজলুল বারী তালুকদার, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এম আর ইসলাম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল বাশার, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক খাদেমুল ইসলাম, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহমেদ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাইদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী, বগুড়া শহর বিএনপির সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, রাজনৈতিক দমনপীড়ন ও নির্যাতন, বিএনপির প্রতি অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচার গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলায় পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদসহ ১০ দফা দাবিতে আজ বেলা তিনটায় বগুড়া শহরের সূত্রাপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জনসমাবেশ ডেকেছে জেলা বিএনপি। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার বলেন, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ বাতিল করতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় থানায় করা ‘গায়েবি’ মামলায় ছয় শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় অসংখ্য ব্যক্তিকে। তখনো গণগ্রেপ্তার করা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। এখন নতুন করে সেই মামলাগুলো ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দমনপীড়ন ও হয়রানি করা হচ্ছে। আবার গণগ্রেপ্তার শুরু হয়েছে।

এদিকে থানায় থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারিয়াকান্দি থানা-পুলিশের অভিযানে উপজেলার কামালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম, নারচি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, নারচি ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য মাইন মিয়া, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদুল, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবর রহমান, সারিয়াকান্দি শহর বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক মুরাদ হোসেন এবং পৌর ছাত্রদলের সদস্য আবদুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজেশ কুমার চক্রবর্তী বলেন, নাশকতার চেষ্টায় জড়িত অভিযোগে আটক বিএনপির সাত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো পরোয়ানা ছিল না। তবে সহিংসতার চেষ্টায় জড়িত থাকায় আগের নাশকতার মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

আদমদীঘি থানা-পুলিশ বুধবার রাতের অভিযানে সান্তাহার পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফেরদৌস, পৌরসভা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদকে আটক করে ‘গায়েবি’ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। আদমদীঘি থানার ওসি রেজাউল করিম বলেন, গ্রেপ্তার দুজনের বিরুদ্ধে নাশকতার তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছাড়াও একজনের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা এবং অন্যজনের বিরুদ্ধে মারামারির একাধিক মামলা আছে।