কঙ্কাল উদ্ধার: কলেজছাত্রী লামিয়া অপহরণ মামলার তদন্তে পিবিআই

লামিয়া আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের লামিয়া আক্তার (১৮) নামের এক কলেজছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে পরিবারের পক্ষ থেকে করা মামলাটির তদন্তভার নিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল বৃহস্পতিবার পিবিআইয়ের সদর দপ্তরের নির্দেশে নাজিরপুর থানা–পুলিশের কাছ থেকে মামলার তদন্তভার বুঝে নিয়েছে পিবিআই।

লামিয়া আক্তার চার মাস আগে নিখোঁজ হন। গত রোববার রাতে তাঁর ঘরের সামনের সিঁড়িতে একটি বেনামি চিঠি পাওয়া যায়। এর সূত্র ধরে পরদিন সোমবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের মোজাহার মোল্লার বাড়ির পাশের জমি খুঁড়ে একটি কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। তবে কঙ্কালটি লামিয়ার কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত শেষে কঙ্কালটি লামিয়ার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় লামিয়ার খালাশাশুড়ি রেক্সোনা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিখোঁজ লামিয়া আক্তার চিথলিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের মেয়ে এবং স্থানীয় সরকারি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মহিলা মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পিরোজপুর কার্যালয়ের পরিদর্শক বায়েজিদ আকন আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লামিয়া আক্তার অপহরণের অভিযোগে করা মামলাটির তদন্তভার থানা–পুলিশ থেকে বুঝে নিয়েছি। লাশ উদ্ধারের পর এখন মামলায় ধারা সংযোজনের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।’

পুলিশ ও নিখোঁজ ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, লামিয়া আক্তারের সঙ্গে একই গ্রামের মো. তরিকুল ইসলামের (২২) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত বছরের ৩০ মে বিয়ের দাবিতে তরিকুল ইসলামের বাড়িতে অবস্থান নেন লামিয়া। এরপর স্থানীয় লোকজনের মধ্যস্থতায় তাঁদের বিয়ে হয়। তবে তরিকুলের মা-বাবা এই বিয়ে মেনে না নেওয়ায় লামিয়া বাবার বাড়িতে চলে আসেন। তরিকুল বিভিন্ন সময়ে লামিয়ার বাবার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন।

আরও পড়ুন

গত বছরের ৬ নভেম্বর রাতে পরিবারের সদস্যদের অগোচরে লামিয়াকে নিয়ে বের হন তরিকুল। এর পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন এই কলেজছাত্রী। তরিকুল ইসলামের বাড়িসহ সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে মেয়ের খোঁজ করেন লামিয়ার বাবা নজরুল ইসলাম। গত ৭ ডিসেম্বর নিখোঁজ লামিয়া আক্তারের মা রাজিয়া বেগম স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিশ্চিত হন, ঘটনার দিন রাতে তরিকুল ও লামিয়া একসঙ্গে ছিলেন। এরপর ২৫ ডিসেম্বর তরিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে সাতজনের নাম উল্লেখসহ নয়জনের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় অপহরণের মামলা করেন রাজিয়া বেগম।

ঘটনার চার মাস পর রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে লামিয়ার ঘরের চালে ও বেড়ায় ঢিল ছুড়ে মারা হয়। এতে তাঁর পরিবারের লোকজন ভয় পেয়ে এক আত্মীয়কে ডাকেন। তিনি এসে ঘরে ঢোকার সময় সিঁড়ির ওপর মাটির চাকা দিয়ে চাপা দেওয়া কাগজ পান। ওই কাগজে লেখা ছিল, ‘তোমাদের মেয়ের লাশ মোজাহার মোল্লার বাড়ির পশ্চিম পাশের বালুর মাঠের মধ্যে রাখা আছে।’ ওই চিঠিতে আরও লেখা ছিল, ‘সব জানে মেজ খালা’। রাতেই লামিয়ার পরিবার পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাহারা বসায়। পরদিন সোমবার সকালে বালুর মাঠ খনন করে একটি কঙ্কাল পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন

লামিয়ার মা রাজিয়া বেগম বলেন, ‘আমার মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নিতে চাচ্ছিলেন না। তাঁরা বিবাহবিচ্ছেদ চাচ্ছিলেন। এ নিয়ে ৭ ডিসেম্বর সালিস বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তার এক দিন আগে লামিয়াকে তার স্বামী তরিকুল তুলে নিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করে।’

নাজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, নিখোঁজ লামিয়ার ঘরের সামনে সিঁড়িতে বেনামি চিঠির সূত্র ধরে একটি কঙ্কাল পাওয়া যায়। কঙ্কালের চুলের বেণি দেখে পরিবারের সদস্যরা লাশটি লামিয়ার দাবি করেছেন। মামলাটির তদন্তভার পিবিআই গ্রহণ করেছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।