ডেকে নিয়ে ছাত্রীকে ‘মানসিক নির্যাতন’, পরীক্ষা দিতে পারেননি

জামালপুর জেলার মানচিত্র

জামালপুরের মেলান্দহের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে মানসিক নির্যাতন ও আবাসিক হল ছাড়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের ছয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে দুই দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ফলে চতুর্থ বর্ষের একটি পরীক্ষা দিতে পারেননি তিনি।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন ফাতেমা বিনতে হোসাইন, তাহরিন তাসমিয়া সিদ্দিকী, মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম, ফারহানুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

গত ২৭ আগস্ট মানসিক নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী ২৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বুলিং ও র‍্যাগিং প্রতিরোধ কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের কোনো প্রতিকার না পেয়ে আজ সোমবার ওই ছাত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়টি জানান।

ওই ছাত্রীর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ফাতেমার নেতৃত্বে ওই ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিনের পাশের মাঠে ডেকে নেওয়া হয়। তারপর তাঁরা সবাই মিলে আবাসিক হলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ওই ছাত্রীকে মানসিক নির্যাতন ও অপদস্থ করেন। পরের দিন ওই ছাত্রীর পরীক্ষার বিষয়টি তাঁরা জানতেন। তারপরও তাঁকে হেনস্তা করা হয়। আবাসিক হলের যে কক্ষে থাকতেন, সেই কক্ষও ছেড়ে দিতে হুমকি দেওয়া হয়। নির্যাতনে ওই ছাত্রী অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি দুই দিন চিকিৎসা নেন।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় বুলিং ও র‍্যাগিং প্রতিরোধ কমিটির কাছে আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। ঘটনার পর থেকে তাঁরা আমাকে আবাসিক হলে উঠতে দেননি। পরে আমি ৩০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তাঁর হস্তক্ষেপে হলে উঠতে পারি। এ ঘটনায় বিচার না পাওয়ায় আমি গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়টি জানাচ্ছি। তাঁরা এখনো আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। আমি ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’

ওই ছাত্রীর অভিযোগ, ‘অভিযোগ করার পর থেকেই আমাকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ভয় দেখাচ্ছেন এবং সমঝোতার জন্য বারবার চাপ দিচ্ছেন। বাড়িতে পরিবারের কাছে আমার নামে নানা বাজে কথা বলছেন। এখন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এ ঘটনায় আমি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের দাবি করছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বুলিং ও র‍্যাগিং প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও ফিশারিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৌসুমী আক্তার বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তদন্ত শুরু করেছি। এই সপ্তাহের মধ্যেই আমরা একটি তদন্ত প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেব।’

এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ফাতেমা বিনতে হোসাইনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোনটি ধরেননি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. কামরুল আলম খান বলেন, কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর যাঁরা অভিযুক্ত হবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।