অনেকেই আমাকে পাগল বলে

নিজের জমি বিক্রি করে পরের জন্য রাস্তা করে দিয়েছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের এক কৃষক। তাঁর নাম গাজী কামাল হোসেন (৫৩)। কেন তিনি কাজটি করলেন, রাস্তা করার পর কী প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন, তা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নেছারউদ্দিন আহমেদ

গাজী কামাল হোসেন

প্রশ্ন :

আপনি যে রাস্তা করে দিয়েছেন, সেই খবর প্রথম আলোতে এসেছে। দেখেছেন?

কামাল হোসেন: দেখেছি। খুব ভালো হয়েছে।

প্রশ্ন :

কোথায় দেখলেন?

কামাল হোসেন: পত্রিকা কিনে এনেছি। আমার বাড়ির কাছে এক দোকানে পত্রিকা বিক্রি হয়।

প্রশ্ন :

আপনাকে নিয়ে প্রতিবেদন হলো, আপনার ছবি ছাপা হলো, মানুষ কিছু বলেছে?

কামাল হোসেন: সবাই ভালো বলছে।

প্রশ্ন :

জমি বিক্রি করে রাস্তা করতে গেলেন কেন?

কামাল হোসেন: রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করা যেত না। গত আশ্বিন মাসে এক সন্তানসম্ভবা নারীকে দেখেছিলাম কষ্ট করে যেতে। ভ্যানগাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে তিনি আঘাত পান। পরে রাস্তার ওপরই সন্তান প্রসব করেন।

প্রশ্ন :

তারপর?

কামাল হোসেন: মাকে গিয়ে ঘটনাটি বললাম। মা বললেন, রাস্তাটি করে দিতে। আমি বললাম, আমার কাছে তো টাকা নাই। তখন মা বললেন, আমার বাবা বেঁচে থাকলে তাঁকে তো খাওয়ানো-পরানো লাগত।

প্রশ্ন :

জমি বিক্রি করে রাস্তা করার চিন্তা স্ত্রী-সন্তানেরা শুনে কিছু বলেছিল?

কামাল হোসেন: ওদের শুরুতে বলিনি।

প্রশ্ন :

পরে যখন জানল?

কামাল হোসেন: বাধা দেয় নাই। আমার সন্তানেরা সে রকম নয়। আর জমি কিনেছিলাম পানির দরে। সেই জমি বিক্রি করলে অসুবিধা কী?

প্রশ্ন :

জমি কতটুকু বিক্রি করেছেন?

কামাল হোসেন: ৩০ শতাংশ। ৭ লাখ টাকায়। পুরো টাকাই রাস্তার পেছনে খরচ হয়েছে। আরও লাগছে। কারণ, রাস্তার কাজ শেষ হয়নি।

প্রশ্ন :

এখন জমি কতটুকু আছে?

কামাল হোসেন: বসতবাড়িসহ দুই একরের বেশি।

প্রশ্ন :

রাস্তাটি তো মাটির।

কামাল হোসেন: হ্যাঁ। আগে সেখানে সরু একটা রাস্তা ছিল। বড় ও উঁচু করেছি।

প্রশ্ন :

এই রাস্তা দিয়ে কি আপনার বাড়ি যাওয়া হয়?

কামাল হোসেন: না, আমার বাড়ির রাস্তা অন্য। এই রাস্তা দিয়ে আড়াই শর মতো পরিবার চলাচল করে। ওরা দরিদ্র।

প্রশ্ন :

আপনি মানুষের জন্য একটি সাঁকো তৈরি করে দিয়েছিলেন।

কামাল হোসেন: হ্যাঁ। ২০০৭ সালে।

প্রশ্ন :

ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনও করেছিলেন।

কামাল হোসেন: মানুষ দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। আমার টাকা খরচ হয়নি। আমাদের শপথ হয় ২০১১ সালে।

প্রশ্ন :

আর নির্বাচনে অংশ নেননি?

কামাল হোসেন: না। নির্বাচন আর কোনো দিন করব না, আল্লাহ যেন আমাকে আর ওই পথে না নেন।

প্রশ্ন :

পরিবারে কে কে আছেন।

কামাল হোসেন: মা, দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রী। বড় ছেলে চাকরি করে। ছোট ছেলে পড়াশোনা করে। মেয়েরা বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে থাকে।

প্রশ্ন :

আপনি কী করেন?

কামাল হোসেন: এখন কৃষিকাজ করি। খুব কষ্ট করে বড় হয়েছি। আমার বাবা যখন মারা যান, তখন আমার বয়স পাঁচ কি ছয়। এরপর মানুষের বাড়িতে কাজ করেছি। ঢাকায় ছিলাম বহু বছর। চকবাজারে কাজ করতাম। তখন খুব কম দামে জমি কিনেছিলাম।

প্রশ্ন :

এই যে মানুষের জন্য রাস্তা করেছেন, সাঁকো করে দিয়েছিলেন, মানুষ কী বলে?

কামাল হোসেন: অনেকে আমার জন্য দোয়া করে। অনেকেই আমাকে পাগল বলে।