দেয়ালে বন্ধ দুই গ্রামের রাস্তা, মানুষের দুর্ভোগ

দেয়ালের একটি অংশের কাজ শেষ হয়েছে। এতে সড়কটি বন্ধ হয়ে পড়েছে। এই সড়ক দুই গ্রামের প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়েছিল।

দুই গ্রামের মধ্যে যোগাযোগকারী রাস্তার ওপর নির্মিত দেয়াল। সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার বহেরারচালা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

জনবহুল দুটি গ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য দেড় কিলোমিটার দূরত্ব কমানো একটি বিকল্প রাস্তা দেয়াল দিয়ে আটকে দিয়েছেন একটি কারখানার লোকজন। সড়কটি প্রায় ৩৫ বছর ধরে ব্যবহার করে আসছিল গ্রাম দুটির বাসিন্দারা। হঠাৎ সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে ওই গ্রামের বাসিন্দারা। ঘটনাটি ঘটে গাজীপুরের শ্রীপুরের বহেড়ারচালায়।

বহেড়ারচালা গ্রামের কয়েকজন বলেন, কিছুদিন ধরে সীমানাদেয়াল নির্মাণের কাজ করছে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। দেয়ালের একটি অংশের কাজ শেষ হয়েছে। এতে সড়কটি বন্ধ হয়ে গেছে। এই সড়ক বহেড়ারচালা গ্রামের সঙ্গে পাশের বেড়াইদেরচালা গ্রামের প্রায় দেড় কিলোমিটারের দূরত্ব কমিয়েছিল। বিকল্প সড়কটি বন্ধ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গ্রাম দুটিতে কয়েক হাজার শ্রমিকসহ অন্তত ৩০ হাজার মানুষের বসবাস।

সড়কটি সরকারি দাবি করে শ্রীপুর পৌরসভার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমজাদ হোসেন বলেন, ৩৫ বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। রাস্তার দুই পাশে কারখানা কর্তৃপক্ষ জায়গা কিনেছে। এখন তাদের স্বার্থে রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে। তারা সেখানে মানুষের চলাচলের রাস্তার ওপর দেয়াল নির্মাণ করছে। এ রাস্তা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা দরকার। কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেছিল, বিষয়টি নিয়ে সবাইকে নিয়ে বসবে, কিন্তু এরপর কোনো খোঁজখবর নেই।

আমরা রাস্তা বন্ধ করিনি। সেখানে কিছু অংশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ বন্ধ রেখেছি।
আবদুর রশিদ, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের বেড়াইদেরচালা প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক

সরেজমিনে দেখা যায়, বহেড়ারচালা ঈদগাহ মাঠ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি রাস্তা শুরু হয়ে একই গ্রামের বংশীঘাটা নামের স্থানে যুক্ত হয়েছে। এরপর বংশীঘাটা হয়ে এটি চলে গেছে বেড়াইদেরচালা গ্রামে। বংশীঘাটার একটু আগেই রাস্তার ওপর স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের ইটের দেয়ালটি। এতে ওই রাস্তা বংশীঘাটা এলাকার সঙ্গে বহেড়ারচালা ঈদগাহ এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দেয়াল নির্মাণ করায় এখন বংশীঘাটা হয়ে বেড়াইদেরচালায় যেতে প্রায় দেড় কিলোমিটারের বেশি ঘুরে মূল সড়ক হয়ে যেতে হয়।

একটি কারখানার কর্মী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুপুরে বিরতিতে কিংবা কাজ শেষে সময় বাঁচাতে এ সড়কে শত শত শ্রমিক যাতায়াত করতেন, কিন্তু এখন তা বন্ধ। একই গ্রামের বাসিন্দা মো. শহিদুল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যে রাস্তায় মানুষ চলাচল করে, সেটি হঠাৎ বন্ধ করাটা অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য।

স্থানীয় লোকজন জানান, শিল্প এলাকা হওয়ায় বিকল্প সড়কটিতে এত দিন ব্যাপক লোকজনের চলাচল ছিল। কিন্তু কারখানার দেয়াল নির্মাণের পর ওই সড়কে আর যাওয়া যাচ্ছে না। এতে মূল সড়ক দিয়ে গন্তব্যে যেতে সময় ও ব্যয়—দুটিই বেড়েছে।

এ বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের বেড়াইদেরচালা প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবদুর রশিদের বক্তব্য নিতে গেলে প্রথমে সেখানে কোনো রাস্তা ছিল না বলে দাবি করেন তিনি। তবে পরে আবদুর রশিদ বলেন, ‘আমরা রাস্তা বন্ধ করিনি। সেখানে কিছু অংশে বাউন্ডারি ওয়াল

নির্মাণ বন্ধ রেখেছি। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাস্তার জন্য জায়গা রেখে দেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে শ্রীপুর ইউএনও তরিকুল ইসলাম বলেন, সেখানে সার্ভেয়ার পাঠাবেন। যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। রাস্তা বন্ধ করে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।