কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন করছেন না, তাঁর ভোট কার বাক্সে যাবে
বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নির্বাচনে না আসায় টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনে বদলে গেছে ভোটের সমীকরণ। আওয়ামী লীগ অনুপস্থিত থাকায় কাদের সিদ্দিকীর বড় ভোটব্যাংক বিএনপি, জামায়াত, নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন আলমগীরের দিকে যাবে—তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। গত শনিবার বিকেলে দেওয়া দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা থেকেই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের জন্ম। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সে ধরনের নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, জানমালের নিরাপত্তাহীনতা ও সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ না থাকায় দলটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।
এই সিদ্ধান্তের ফলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। ফলে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না।
দীর্ঘদিন ধরে এই আসনে কাদের সিদ্দিকীর একটি শক্তিশালী ভোটব্যাংক ছিল। এবার আওয়ামী লীগও নির্বাচনে নেই। ফলে কাদের সিদ্দিকী ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ভোট কোন দিকে যাবে—তা নিয়ে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা।
এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী শফিকুল ইসলাম খান। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন ব্যবসায়ী ও লাবিব গ্রুপের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আলমগীর। প্রায় এক বছর ধরে তিনি নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় আছেন।
উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সখীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই আসনে কাদের সিদ্দিকীর একটি বড় ভোটব্যাংক আছে। এবার আওয়ামী লীগও নেই। ফলে আমরা নির্বাচনে থাকলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হতাম। পাতানো নির্বাচনে আদৌ আমরা ভোটকেন্দ্রে যাব কি না কিংবা আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ভোট কোথায় যাবে—এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন আলমগীরের প্রধান সমর্থক ও সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাছেদ বলেন, ‘বিএনপির একটি অংশ, কাদের সিদ্দিকী ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বড় একটি অংশ সালাউদ্দিন আলমগীরের সঙ্গে আছে। কারচুপি না হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন আলমগীরই নির্বাচিত হবেন, ইনশাল্লাহ।’
এ প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমির আলামিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এ আসনের ভোটাররা নৌকা, ধানের শীষ ও গামছা প্রতীকে ভোট দিয়ে দেখেছে—কিন্তু দেশ ও সমাজের কোনো উন্নয়ন হয়নি। এবার ভোটাররা দাঁড়িপাল্লাকে আস্থার প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
কাদের সিদ্দিকীর নির্বাচনে না থাকা প্রসঙ্গে বিএনপির প্রার্থী আহমেদ আযম খান বলেন, ‘যারা নির্বাচনকে ভয় পায়, তারাই বলে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নির্বাচনের বিকল্প নেই। তারেক রহমান দেশে ফেরার পর দেশের মানুষ উজ্জীবিত। ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে।’
এ ছাড়া এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সমাজের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নাজমুল হাসান মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নেই। এই সুযোগে ভোটাররা জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে আছেন।
কাদের সিদ্দিকী নির্বাচনের বাইরে থাকায় টাঙ্গাইল-৮ আসনে ভোটের সমীকরণ কোন দিকে মোড় নেয়—সেদিকেই এখন নজর স্থানীয় লোকজনের।