ফরিদপুরে হঠাৎ আলোচনায় খন্দকার মোশাররফ
ফরিদপুরের রাজনীতিতে কি আবারও প্রত্যাবর্তন করছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন? ফরিদপুর-৩ (সদর) আসন থেকে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন—এই খবর রটে যাওয়ার পর তাঁকে নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে আলোচনা। তবে খন্দকার মোশাররফ বলেছেন, তিনি মনোনয়ন ফরম কেনেননি। তবে অত্যুৎসাহী হয়ে তাঁর পক্ষে কেউ কিনে থাকতে পারেন। তবে এ বিষয়ে তাঁর কোনো স্পষ্ট ধারণাও নেই।
ফরিদপুর-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ দীর্ঘদিন ফরিদপুরের রাজনীতি থেকে নির্বাসনে রয়েছেন। এমনকি প্রায় দেড় বছর থেকে তিনি দেশেই থাকছেন না। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখল ও টেন্ডারবাজিসহ নানা অভিযোগে ফরিদপুরে বরকত-রুবেল দুই ভাইসহ খন্দকার মোশাররফের অনুসারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ২০২০ সালের ৭ জুন অভিযান নামে। এর দুই দিন পর ৯ জুন খন্দকার মোশাররফ ঢাকা চলে যান। এরপর আর মোটে দুই বার তিনি ফরিদপুরে এসেছিলেন। দুবারই এক রাতের বেশি থাকেননি। এরপর ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে তিনি বিদেশে চলে যান। বর্তমানে তিনি সুইজারল্যান্ডে তাঁর মেয়ের বাড়িতে রয়েছেন। এদিকে সংসদে অনুপস্থিতির ৯০ কার্যদিবস পার হওয়ার আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর তিনি আবেদন জানিয়ে জাতীয় সংসদ থেকে ছুটি নেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গত শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়। এ কার্যক্রম চলে মঙ্গলবার পর্যন্ত। আওয়ামী লীগের নেতাদের সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর-৩ আসনের জন্য দলের মনোনয়ন চেয়েছেন ১১ জন। এর মধ্যে এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফের নাম দেখে সবার মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।
আমার স্বাক্ষর ছাড়া মনোনয়ন ফরম কেনা বা জমা দেওয়ার সুযোগ কোথায়? আমি নির্বাচন করলে এ রকম চোরের মতো মনোনয়ন ফরম কিনব কেন? আমার বয়স এখন ৮৫। নানা রোগে ভুগছি। তা ছাড়া ফরিদপুরের যে পরিবেশ, তাতে রাজনীতি করার মতো নেই। শুধু গালাগালি চলে রাজনীতির নামে।
মনোনয়ন ফরম কেনা অপর ব্যক্তিরা হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষ, ফরিদপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শামীম হক, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. ফারুক হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইফুল আহাদ, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য এ কে আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ যশোদা জীবন দেবনাথ, বঙ্গবন্ধু সেনা পরিষদের সহসভাপতি এম ইদ্রিস আলী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সাবেক এপিএস সত্যজিৎ মুখার্জি এবং ওয়াজেদ মিয়া ফাউন্ডেশনের সভাপতি ফরহাদ কবির।
খন্দকার মোশাররফ আর রাজনীতি করবেন না—এমন কথা তিনি মাঝেমধ্যে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন। তবে সর্বশেষ তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে তিনি নির্বাচন করবেন।
ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক মোল্লা বলেন, খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, এ কথা তিনি শুনেছেন। তবে সম্প্রতি তাঁর (মোশাররফ) সঙ্গে কথা না হওয়ায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত তিনি জানেন না।
মনোনয়নপ্রত্যাশী বিপুল ঘোষ বলেন, খন্দকার মোশাররফ হোসেন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, এ খবর তাঁর জানা নেই। তবে মনোনয়ন ফরম যেহেতু অনলাইনে কেনা ও পূরণ করে জমা দেওয়ার সুযোগ আছে, সে ক্ষেত্রে যে কেউ যেকোনো জায়গা থেকে মনোনয়ন ফরম কিনতে ও জমা দিতে পারেন।
সুইজারল্যান্ডে অবস্থানরত খন্দকার মোশাররফের সঙ্গে আজ বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে মুঠোফোনে কথা হয়। খন্দকার মোশাররফ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনেননি। তবে অত্যুৎসাহী হয়ে তাঁর পক্ষে কেউ কিনে থাকতে পারেন। তবে এ বিষয়ে তাঁর কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই।
খন্দকার মোশাররফ বিস্ময়ের সুরে বলেন, ‘আমার স্বাক্ষর ছাড়া মনোনয়ন ফরম কেনা বা জমা দেওয়ার সুযোগ কোথায়? আমি নির্বাচন করলে এ রকম চোরের মতো মনোনয়ন ফরম কিনব কেন? সবাইকে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সবাইকে নিয়ে কিনতাম, চোরের মতো নয়।’ তিনি বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৮৫। নানা রোগে ভুগছি। তা ছাড়া ফরিদপুরের যে পরিবেশ, তাতে রাজনীতি করার মতো নেই। শুধু গালাগালি চলে রাজনীতির নামে।’
রাজনীতি করলেই যে নির্বাচন করতে হবে এমন কোনো কথা নেই মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, নির্বাচনের পরপরই তিনি দেশে ফিরে আসবেন এবং নিজ বাড়িতে বসবাস শুরু করবেন। তাঁর পরিবারের একটি ঐতিহ্য আছে, সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকবেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ফরিদপুর-৩ আসনে খন্দকার মোশাররফ প্রথম নির্বাচন করেন ১৯৯৬ সালে। ওই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি জিততে পারেননি। ২০০৮ সালে তিনি তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে খন্দকার মোশাররফ প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী হন। এরপর তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হন। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সেই মন্ত্রিসভায় স্থান হয়নি মোশাররফের।