বেড়াতে পারেন সীতাকুণ্ডের সবুজ গালিচার সৈকতে

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সৈকতেছবি: প্রথম আলো

কলকল ধ্বনিতে জোয়ারের ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ আছড়ে পড়ছে সৈকতে। আর আঁকাবাঁকা মাটির ভাঁজে জমছে পানি। মাটির ওপর সবুজ ঘাস ঢেউয়ে পানিতে ভিজে যেন সতেজ হচ্ছে। মনে হবে সৈকতজুড়ে কেউ যেন বিছিয়ে রেখেছে সবুজ ঘাসের গালিচা। ম্যানগ্রোভ বনে মাঝেমধ্যে দেখা মেলে হরিণের উঁকিঝুঁকি, কখনো কখনো ছুটে চলা লাল কাঁকড়া।

এ দৃশ্য দেখা যায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে। মনে হবে যেন কল্পনায় শিল্পীর তুলিতে আঁকা প্রাকৃতিক দৃশ্য। সবুজ গালিচার এই সৈকতে ঈদে অনায়াসে বেড়িয়ে আসতে পারেন।

মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, দলে দলে দর্শনার্থীরা আসছেন। কেউ হেঁটে, আবার কেউ নৌকায় চড়ে। সৈকতে আছে দর্শনার্থীদের জন্য ওয়াশ ব্লক, রয়েছে দোকানপাটও। বেড়িবাঁধের পাশে রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ও ওয়াশব্লক। পুরোনো খাবারের দোকানের পাশাপাশি নতুন করে নির্মিত হচ্ছে একাধিক রেস্তোরাঁ।
সৈকতটির পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের সহস্রধারা ও সুপ্তধারা নামে দুটি ঝরনা। ফলে পর্যটকেরা এখানে পেয়ে যাচ্ছেন পূর্ণ আনন্দের ঠিকানা।

গুলিয়াখালী সৈকতটি দাঁড়িয়ে যায় ২০১৪ সাল থেকে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একদল শিক্ষার্থী সৈকতটিতে ঘুরতে এসে কিছু ভিডিও ও ছবি ফেসবুক, ইউটিউবে আপলোড করেন। এরপর সৈকতটির সৌন্দর্যের কথা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতকে পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে সরকার। উপকূলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫৯ দশমিক ১০ একর জায়গার সৈকতটিকে পর্যটক স্পট হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

সৈকতে কথা হয় চাঁদপুরের বাসিন্দা মহিন উদ্দিন শাওনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক। এখন তাঁদের ছুটি চলছে। শহরের যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পেতে তিনি গুলিয়াখালী সৈকতে এসেছেন।

সেখানে কথা হয় লাইফবোট মালিক সমিতির সদস্য জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি নিজেই দর্শনার্থীদের নিয়ে বেড়িবাঁধ থেকে সৈকতে নিয়ে যান। তিনি বলেন, বেড়িবাঁধ থেকে সৈকত পর্যন্ত নৌকাভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। প্রতিটি নৌকায় ২০ জন করে নেওয়া হয়। সৈকত থেকে সাগরে ভ্রমণে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হয় ৫০ টাকা। রিজার্ভ ভাড়া ৬০০ টাকা নেওয়া হয়। গুলিয়াখালী সৈকতে যাত্রী আনা-নেওয়ার জন্য ১৫টি লাইফবোট আছে।

গুলিয়াখালী ম্যানগ্রোভ বনে মাঝেমধ্যে দেখা মেলে হরিণের উঁকিঝুঁকি, কখনো কখনো ছুটে চলা লাল কাঁকড়া
ছবি: প্রথম আলো

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তাঁরা সীতাকুণ্ড পৌর সদরের বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রীদের নিয়ে গুলিয়াখালী সৈকতের বেড়িবাঁধ পর্যন্ত যান। এতে জনপ্রতি ভাড়া নেন ৩০ টাকা। প্রতি অটোরিকশাতে পাঁচজন যাত্রী নেওয়া হয়। এ পথে ১২০টি অটোরিকশা আছে বলে জানান তিনি।

গুলিয়া সৈকত ব্যবস্থাপনায় রয়েছে জেলা প্রশাসন। সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, সারা বছর গুলিয়াখালী সৈকতে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। বিকেল হলেই দর্শনার্থীরা সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে গাড়ি পার্কিং ও শৌচাগারের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, দর্শনার্থীদের কেউ কেউ যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নোংরা করেন। এ ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে তিনি পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ জানান।

ঢাকা থেকে কেউ যেতে চাইলে চট্টগ্রামের বাসে করে সীতাকুণ্ড বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে যেতে চাইলে নগরের অলংকার থেকে ৮ ও ১৭ নম্বর বাসে করে সীতাকুণ্ড স্টেশনে নামতে হবে। একইভাবে ট্রেনে সীতাকুণ্ড স্টেশনে নামতে হবে। এরপর নামারবাজার সড়কের সেতু এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডে এসে অটোরিকশা ভাড়া করে গুলিয়াখালী বেড়িবাঁধে আসতে হবে।